শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫

বিএনপিকে জামায়াত নেতা রফিকুল: খালি নির্বাচন নির্বাচন করেন, খুনি চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কথা বলেন না কেন

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান বিএনপিকে উদ্দেশ করে প্রশ্ন তুলে বলেছেন, “আপনাদের তো শুধু প্রতিনিয়ত নির্বাচন চাইতেই দেখি, কিন্তু চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কথা বলেন না কেন? নির্বাচন চান, অথচ মিটফোর্ডের খুনিদের নিয়ে কথা বলেন না কেন? আপনারা কি এখনো দলীয় সন্ত্রাসীদের চিন্তা-চেতনার ঊর্ধ্বে উঠতে পারেননি?” শনিবার (১২ জুলাই) বাদ জোহর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট থেকে জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে মিটফোর্ডে বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডসহ সারা দেশে খুন-ধর্ষণের প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিলোত্তর সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। রফিকুল ইসলাম খান বলেন, “মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ব্যবসায়ী সোহাগ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা সারা দেশের মানুষকে অবাক করেছে। সোহাগের অপরাধ কী ছিল? শুনছি তিনি নাকি যুবদলের লোক ছিলেন। যে দলেরই হোক, মানুষ তো। তার অপরাধ, তার কাছে চাঁদা চেয়েছিল, তিনি দেননি। এটা কোনো অপরাধ?” তিনি বলেন, “বাংলাদেশের সব শ্রেণিপেশার হাজার হাজার মানুষের জীবন, লাখো মানুষের রক্তের বিনিময়ে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ, শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদকে বিদায় করেছিল। বাধ্য হয়ে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে পালাতে বাধ্য হয়েছিলেন। মানুষ নিশ্চিন্ত হয়েছিল, আশ্বস্ত হয়েছিল সন্ত্রাসীদের কাছে আর জীবন দিতে হবে না, চাঁদা দিতে হবে না, আর মা-বোনদের ইজ্জত নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হবে না। কিন্তু আওয়ামী লীগের অবর্তমানে একটি দল বাংলাদেশের মালিক বনে গেছে।” তিনি আরও বলেন, “আমরা তো একসঙ্গে আন্দোলন করেছি। আমরা তো এভাবে আগে কখনো নামিনি। বিশেষ করে ৫ আগস্টের পরে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইডেন কলেজ, বুয়েটসহ সারা বাংলাদেশে যে প্রতিবাদের আগুন জ্বলে উঠেছিল আওয়ামী লীগ, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে, তেমনি সারা দেশে গতরাতেও প্রতিবাদের আগুন জ্বলে উঠেছে দুর্নীতি, চাঁদাবাজ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে। এই বিক্ষোভ তো হওয়ার কথা ছিল না। হাসিনা তো পালিয়ে গেছে। তাহলে চাঁদাবাজি-সন্ত্রাস কারা করছে?” দেশের নাগরিকদের সজাগ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “সোহাগকে যখন হত্যা করা হয়, তখন বহু লোক আশপাশে ছিলেন, চাঁদাবাজ ছিলেন মাত্র কয়েকজন। জনগণ পায়ের জুতো খুলে মারলেই তো চাঁদাবাজরা মাটির সঙ্গে মিশে যেত। জনগণ যদি ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে না পারে, তাহলে এই সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজরা আজকে সোহাগকে মেরেছে, কাল আপনাকে আমাকে মারবে, পরে যাকে ইচ্ছে তাকে মারবে। আমরা এই সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজদের হাতে বাংলাদেশের দায়িত্ব ছেড়ে দিতে পারি না।” রফিকুল ইসলাম খান বলেন, “চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসীদের কোনো পরিচয় নেই, তাদের হাতে জামায়াত আর জনগণকে জিম্মি হতে দেবে না। কারা কারা চাঁদাবাজদের গডফাদার তা দেশের মানুষ জানে। খুনি-চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে দলমত ধর্ম নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।” অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আপনারা কিন্তু ক্ষমতায় বসেননি। ১৮ কোটি বাংলাদেশি আপনাদের ক্ষমতায় বসিয়েছে, তামাশা করার জন্য না, আরাম-আয়েশে চেহারা বড় করার জন্য জনগণ আপনাদের ক্ষমতায় বসায়নি। আপনারা চাঁদাবাজদের গ্রেপ্তার করতে পারেন না কেন? ভয় পান? থানা থেকে সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়, আপনাদের কাজটা কী? এসব হত্যাকাণ্ড, থানা থেকে আসামি ছিনতাইয়ের ঘটনায় বহু আগে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ করা উচিত ছিল।” তিনি আরও বলেন, “ক্ষমতার স্বাদ গ্রহণ করেন, তাতে সমস্যা নেই, কিন্তু দায়িত্বটা তো ঠিকঠাক পালন করেন। চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, খুনিরা কত লম্বা, খাটো না ছোট তা দেখার সময় আপনাদের থাকা উচিত নয়, মানুষেরও সে সময় নেই। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিন। গতরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে বাংলাদেশের গ্রামেগঞ্জে, নগরে বন্দরে মানুষ ফুঁসে উঠেছে। এই ফুঁসে ওঠা আগুন যদি জ্বলে উঠে, তাহলে কোনো সন্ত্রাসী রেহাই পাবে না। খুনি, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ যেই হোক, গ্রেপ্তার করেন। কোন দলের লোক, কত শক্তিশালী গ্রুপের লোক তা যদি বিবেচনা করেন, তাহলে ক্ষমতা ছেড়ে দেন।” তিনি সতর্ক করে বলেন, “শপথগ্রহণ করেছেন জনগণের জানমাল, ইজ্জত রক্ষা করবেন। বিশেষ গোষ্ঠীকে সমর্থন দিয়ে ক্ষমতায় আনার ষড়যন্ত্রে এই সরকারের যারাই জড়িত হবে, ফ্যাসিবাদের যে পরিণতি হয়েছে, তাদেরও একই পরিণতি হবে। অনেক থানা ও অফিস একটি দলের দলীয় কার্যালয়ে পরিণত হয়েছে। এজন্য কিন্তু জনগণ, ছাত্রজনতা জীবন দেয়নি। সরকারকে বলব, সব শ্রেণিপেশার মানুষকে আহ্বান জানাব, ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।” সভাপতির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, “দীর্ঘ সাড়ে ১৭ বছরের সংগ্রাম লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে আমরা ফ্যাসিবাদ, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছি। আমরা রক্ত দিয়েছি, জীবন দিয়েছি, পঙ্গুত্ব বরণ করেছি। অথচ লক্ষ্য করছি, যাদের সঙ্গে আমরা দীর্ঘসময় আন্দোলন সংগ্রাম করেছি, কিন্তু জুলাই-আগস্টের যে আকাঙ্ক্ষাকে ভূলুণ্ঠিত করে দিয়ে সেই রাজনৈতিক দল ৫ আগস্টের পর থেকে খুন, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ধর্ষণসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হয়ে গেছে।” তিনি বলেন, “তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন চাইছেন। কিন্তু খুনিদের বিচার, সংস্কার, বিচার, নির্বাচন ব্যবস্থার কোনো সংস্কারের জন্য বক্তব্য নেই। নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের কাছে তাদের কোনো দাবি নেই। দ্রুত নির্বাচন না দিলে শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হবে না, বলে বরং তারাই অত্যন্ত সুকৌশলে শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছেন।” তিনি আরও বলেন, “আপনাদের কিন্তু সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, খুনিদের বিরুদ্ধে বক্তব্য নেই। শুধু নির্বাচন নির্বাচন করছেন। জনগণ এখন একত্রিত। নির্বাচনের মাধ্যমে আপনারা মনে করছেন ক্ষমতায় গিয়ে খুন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজির অভয়ারণ্যে পরিণত করবেন। আশায় গুঁড়ো বালি। জনগণ আগামী দিনে কোনো চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসের গডফাদারদের ক্ষমতায় বসাবে না।” বুলবুল বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যতিব্যস্ত করার জন্য, বিব্রত করে নির্বাচনের পরিবেশ না হলেও নির্বাচনকে এগিয়ে আনার মাধ্যমে আগামী দিনে ক্ষমতায় বসার দুঃস্বপ্ন দেখছেন। সেই দুঃস্বপ্ন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। এ দেশের জনগণ কোনো হত্যাকারী, ধর্ষণকারী, সন্ত্রাসী চাঁদাবাজদের ক্ষমতায় বসাবে না।” তিনি সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে বলেন, “মিটফোর্ডে ব্যবসায়ী সোহাগ হত্যার বিচারের জন্য তদন্ত কমিটির প্রয়োজন নেই। এটা দেশের জনগণ জানে কোন দলের লোকজন জড়িত। অবিলম্বে তাদের গ্রেপ্তার ও উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা নিতে হবে। আদালতের মাধ্যমে বিচার কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে।” ক্ষমতায় যাওয়ার দুঃস্বপ্নে বিভোর দলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “হত্যাকারী, ধর্ষণকারী, সন্ত্রাসী চাঁদাবাজদের আপনারা লালনপালন করছেন। তাদের দিয়ে আগামী নির্বাচনের বৈতরণী পার হওয়ার ষড়যন্ত্র করছেন। আপনারা এ ধরনের অপকর্ম দিয়ে আগামী দিনের নির্বাচনকে প্রভাবিত করার কোনো সুযোগ পাবেন না। জনগণ এখন সব জেনে গেছে। জনগণ আপনাদের হাতে আর দেশকে বর্গা দেবে না। আগামী দিনে একটু সুষ্ঠু নির্বাচনে সজাগ সচেতন জনগণ হত্যাকারী, ধর্ষণকারী, সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের গডফাদারদের প্রত্যাখ্যান করবে।” ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, “লগি-বৈঠার তাণ্ডবের সময় মানুষকে হত্যার পর নৃত্য করতে দেখেছিলাম। ১৭ বছর পরে আবারও মিটফোর্ডের সামনে তার চাইতেও ভয়াবহ দৃশ্য দেখতে পেলাম। মানুষের গায়ের লোম শিউরে ওঠে। বর্তমান সভ্যতার যুগে মৃত্যুর পরও পাথর নিক্ষেপ করতে পারে। তাদের চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, ধর্ষণের ইতিহাস আমরা এক বছর ধরে দেখতে পাচ্ছি।” তিনি বলেন, “ছাত্র-জনতা যে স্লোগান দিয়েছিল, বৈষম্য, চাঁদাবাজি, ধর্ষণ, সন্ত্রাস থাকবে না। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, একটি দল ক্ষমতায় যাওয়ার আগেই এসব কর্মকাণ্ড শুরু করেছে। আমরা বলতে চাই, চাঁদাবাজদের আস্তানা, ঢাকাসহ সারা দেশে থাকবে না। ছাত্রজনতা ঐক্যবদ্ধভাবে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে।” ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, “তারা সংস্কার চায় না, তারা ভোট ডাকাতির নির্বাচন চায়। জনগণ তাদের আশায় গুঁড়ো বালি করে দেবে।” সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিলটি বায়তুল মোকাররম থেকে শুরু হয়ে শাহবাগে গিয়ে শেষ হয়। বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলে কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা অংশগ্রহণ করেন।

Share This Post

শেয়ার করুন

Author:

Note For Readers: The CEO handles all legal and staff issues. Claiming human help before the first hearing isn't part of our rules. Our system uses humans and AI, including freelance journalists, editors, and reporters. The CEO can confirm if your issue involves a person or AI.