ভয় দেখিয়ে প্রশাসন ব্যবহার করে লুটেরা রাষ্ট্র কায়েম হতে দেবে না এনসিপি: নাহিদ ইসলাম
পিরোজপুর: জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ভয় দেখিয়ে, পেশিশক্তি ও প্রশাসনের অপব্যবহার করে লুটেরা রাষ্ট্র কায়েম করতে দেবে না এনসিপি।‘দেশ গঠনে জুলাই পদযাত্রা’র অংশ হিসেবে রোববার দুপুরে পিরোজপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এনসিপি আয়োজিত এক পথসভায় তিনি এ কথা বলেন। অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “গণঅভ্যুত্থানের পর আমরা যে সরকার পেয়েছি, আসুন সকলে মিলে এই সরকারকে সহযোগিতা করি এবং দেশটাকে নতুন করে গড়ে তুলি।” তবে তিনি উল্লেখ করেন, সবাই এই আহ্বানে সাড়া দেয়নি। “কেউ কেউ শুধু ক্ষমতা চায়, দ্রুত নির্বাচন চায়। সংস্কার তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। কিন্তু আমরা বলেছি, সংস্কার প্রয়োজন, আওয়ামী লীগের বিচার প্রয়োজন এবং একটি নতুন সংবিধান প্রয়োজন,” বলেন তিনি। নাহিদ আরও বলেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অনেক দল ও মত আমাদের সঙ্গে ছিল। কিন্তু সংস্কারের পক্ষে যদি কেউ না থাকে, তবে যারা রাজপথে নেমেছিলাম এবং যারা আমাদের আহ্বানে রাজপথে নেমেছিলেন, তাদের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা আছে। আমরা রাজপথ ছাড়তে পারি না। ঝড়-বৃষ্টি যাই হোক, রাজপথে থেকে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, এনসিপি একটি বৈষম্যমুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত এবং ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র গড়তে চায়। “আমরা পুরোনো দুর্নীতির ব্যবস্থায় ফিরতে চাই না। আমাদের আন্দোলন ছিল বৈষম্যের বিরুদ্ধে। ধর্মীয়, সামাজিক ও শ্রমিকদের বৈষম্যসহ সকল বৈষম্য দূর করতে হবে,” বলেন তিনি। পূর্ববর্তী সরকারের পতনের কথা উল্লেখ করে নাহিদ বলেন, “ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটেছিল, যারা ১৬ বছর ধরে জোর করে ক্ষমতায় টিকে ছিল। গুম, খুন, নির্যাতন, দুর্নীতি, লুটপাট এবং ভোটাধিকার হরণ—এমন কোনো অত্যাচার নেই যা তারা করেনি।” তিনি বলেন, গত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারেনি। “শুধু সরকার বা রাজনৈতিক দল নয়, পুলিশ, আমলাতন্ত্র এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের সকল বাহিনী মানুষের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে। জনগণ জুলুমের সরকার থেকে মুক্তির জন্য রাজপথে নেমেছিল।” নাহিদ বলেন, “আমরা একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান নিয়ে এসেছি, শহীদদের রক্তের ঋণ শোধ করার আহ্বান নিয়ে, জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদ বাস্তবায়নের দাবি নিয়ে।” এনসিপি একটি ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়, যেখানে বৈষম্য বা দুর্নীতি থাকবে না এবং সকলের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, “চাঁদাবাজ, দুর্নীতিবাজ ও দখলদারদের থেকে মুক্ত করতে এনসিপির নেতৃবৃন্দ রাজপথে আছে এবং থাকবে। কেউ যদি মনে করে ভয় দেখিয়ে, পেশিশক্তি বা প্রশাসন ব্যবহার করে লুটেরা রাষ্ট্র কায়েম করবে, এনসিপি তা হতে দেবে না।” সীমান্ত হত্যার সমালোচনা করে তিনি বিজিবি’র প্রতি কঠোর হওয়ার আহ্বান জানান এবং বলেন, “সীমান্তে হত্যাকাণ্ড বন্ধ না হলে আমরা সেখানে লংমার্চ করব।” ফেনীর বন্যার উল্লেখ করে তিনি টেকসই বাঁধ নির্মাণ ও দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি ইঙ্গিত করে নাহিদ বলেন, “গণঅভ্যুত্থানের রক্তের মাধ্যমে এই সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সরকার যেন এই কথা ভুলে না যায়।” তিনি জানান, গত বছরের আগস্টের এক দফা ঘোষণার মতো এ বছর ৩ আগস্ট ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নদী ভাঙনসহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধান এবং জুলাই ঘোষণাপত্র বাস্তবায়নের দাবিতে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।