চরমোনাই পীর বলেন, “বিদেশি সংস্থা, এমনকি জাতিসংঘের অফিসের জন্য প্রযোজ্য সুবিধার চেয়ে বেশি সুবিধা প্রদান করে কেন এই কমিশনকে অফিস দিতে হবে, তা আমাদের বুঝে আসে না। এই অফিসের কর্মকৌশল কী? লক্ষ কী? কর্মনীতি কী? এসব কিছুই আমাদের সামনে পরিষ্কার নয়।” তিনি আরও জানান, বাংলাদেশে কোনো যুদ্ধাবস্থা বা জাতিগত হানাহানি নেই, তাই এই অফিসের কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। তিনি দাবি করেন, “অবিলম্বে এই অভিশপ্ত কার্যালয় স্থাপনের অনুমতি বাতিল করতে হবে। অন্যথায় দেশকে বাঁচাতে আমাদের রাজপথে অবস্থান নিতে হতে পারে।”
জাতিসংঘের ব্যর্থতার প্রসঙ্গ
চরমোনাই পীর জাতিসংঘের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, “বিশ্ব বাস্তবতায় জাতিসংঘ একটি ব্যর্থ সংস্থায় পরিণত হয়েছে। ফিলিস্তিনে লাখো মানুষের মৃত্যু রোধে, ইয়েমেন, আরাকান এবং আফ্রিকা অঞ্চলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় জাতিসংঘ ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশের মতো শান্ত ও নিরাপদ দেশে এমন ব্যর্থ সংগঠনের কমিশনের কার্যালয় খোলার কোনো কারণ নেই, বরং এটি বিপদের কারণ হতে পারে।” তিনি দেশ ও জাতির দীর্ঘমেয়াদী স্বার্থ রক্ষায় এই কার্যালয়ের কার্যক্রম বন্ধের দাবি জানান।
সরকারের মূল দায়িত্বে ব্যর্থতার অভিযোগ
মুফতি রেজাউল করীম বলেন, “৫ আগস্টের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে আমরা ফ্যাসিবাদের বিচার, সংস্কার এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রশ্নাতীত সমর্থন দিয়েছি। কিন্তু দুঃখের সাথে বলতে হয়, সরকার তার মূল কাজে মনোযোগ না দিয়ে ম্যান্ডেটের সাথে সাংঘর্ষিক কাজে ব্যস্ত। বিচারে কোনো অগ্রগতি নেই, সংস্কার থমকে আছে, এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে।” তিনি সরকারের এই দৃষ্টিভঙ্গির সমালোচনা করে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের অফিস নিয়ে ব্যস্ততার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ করেন।
মানবাধিকারের সংজ্ঞা নিয়ে ভিন্নমত
চরমোনাই পীর মানবাধিকারের পশ্চিমা সংজ্ঞার সমালোচনা করে বলেন, “পশ্চিমাদের মানবাধিকারের সংজ্ঞা আমাদের হাজার বছরের ঐতিহ্য, বিশ্বাস, সংস্কৃতি ও চরিত্রের সাথে সাংঘর্ষিক। সমকামিতা, গর্ভপাত, ট্রান্সজেন্ডার, মৃত্যুদণ্ড মওকুফের মতো বিষয়গুলো তারা মানবাধিকার হিসেবে বিবেচনা করে, কিন্তু আমাদের সমাজে এগুলো অপরাধ হিসেবে গণ্য।” তিনি সতর্ক করে বলেন, এই অফিস এই ধরনের বিষয়গুলোকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করবে এবং সমাজের বাধার মুখে বাংলাদেশকে মানবাধিকার বিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করতে পারে। এর ফলে বিদেশি বিনিয়োগ হ্রাস, পর্যটক আগমন কমে যাওয়া এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশকে বর্বর জাতি হিসেবে উপস্থাপনের ঝুঁকি রয়েছে।
‘ভয়ংকর বিষবৃক্ষ’ রোপণের সতর্কতা
মুফতি রেজাউল করীম এই পরিস্থিতিকে ‘ভয়ংকর বিষবৃক্ষ রোপণের’ সাথে তুলনা করে বলেন, “এর ভয়াবহ পরিণতি আমাদেরকে দীর্ঘ সময় ভোগ করতে হবে।” তিনি সরকারকে এই কার্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান জানান এবং দেশের স্বার্থ রক্ষায় জনগণের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।