সোমবার, ২১ জুলাই, ২০২৫

আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে তিন নির্বাচনের কর্মকর্তাদের তথ্য চাইছে ইসি

 গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের তথ্য সংগ্রহের জন্য নির্বাচন কমিশন (ইসি) সব বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) কাছে চিঠি পাঠিয়েছে। এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় গত ২২ জুন নির্বাচনী অনিয়মের অভিযোগে দায়ের করা একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এই তিন নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা, প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার এবং পোলিং অফিসারদের বিস্তারিত তথ্য চেয়ে ইসির কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছে। চিঠিতে এসব কর্মকর্তাদের নাম, পিতা-মাতার নাম, স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, পাসপোর্ট নম্বর, মোবাইল নম্বর এবং ভোটকেন্দ্রভিত্তিক তথ্য সরবরাহের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে, ইসি রোববার (২০ জুলাই) বিভাগীয় কমিশনার ও ডিসিদের কাছে চিঠি পাঠিয়ে এই তথ্য সংগ্রহের নির্দেশ দিয়েছে। ইসি ডেপুটি সেক্রেটারি মনির হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, “পিবিআইয়ের তদন্ত ও ন্যায়বিচারের স্বার্থে” এই তথ্য জরুরি ভিত্তিতে সরবরাহ করতে হবে।

জাতীয় নির্বাচনে সাধারণত ৬৪ জেলার ডিসি এবং ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনাররা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও) সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, তবে চিঠিতে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের তথ্যের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়নি। এ ছাড়া, জেলা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তারাও নির্বাচনী দায়িত্বে অংশ নেন। প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসার মিলিয়ে জাতীয় নির্বাচনে প্রায় দুই লাখ কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করে থাকেন।

পিবিআইয়ের তদন্তের অংশ হিসেবে এই তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। মামলাটি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) অভিযোগের ভিত্তিতে দায়ের করা হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে, এই তিন নির্বাচনে ইসি তাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে এবং ভোটারদের ভয়ভীতি দেখিয়ে জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়াই নির্বাচন পরিচালনা করেছে। মামলায় তিন নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার, কয়েকজন নির্বাচন কমিশনার এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

এই তিন নির্বাচন—২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪—দেশের ইতিহাসে বিতর্কিত হিসেবে বিবেচিত। ২০১৪ সালের নির্বাচন বিরোধী দল বিএনপি বয়কট করেছিল, ফলে ১৫৩ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৮ সালের নির্বাচন ভোট কারচুপির অভিযোগে ‘মধ্যরাতের নির্বাচন’ হিসেবে কুখ্যাত। ২০২৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলেও আওয়ামী লীগের ‘নিয়ন্ত্রিত’ স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মাধ্যমে নির্বাচনকে প্রতিযোগিতামূলক দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছিল।

ইসির এই উদ্যোগ নির্বাচনী স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তবে এই তথ্য সংগ্রহের পর তদন্ত কীভাবে এগোবে এবং এর ফলাফল কী হবে, তা নিয়ে জনমনে কৌতূহল রয়েছে।


Share This Post

শেয়ার করুন

Author:

Note For Readers: The CEO handles all legal and staff issues. Claiming human help before the first hearing isn't part of our rules. Our system uses humans and AI, including freelance journalists, editors, and reporters. The CEO can confirm if your issue involves a person or AI.