২০০৪ সালের দশ ট্রাক অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও তারেক রহমানের প্রতি ভারতের দীর্ঘদিনের অবিশ্বাস থাকলেও, নয়াদিল্লি এখন বিএনপিকে কেন্দ্র করে কূটনৈতিক কৌশল পুনর্বিন্যাস করছে। বিএনপি ক্ষমতায় এলে তারেক রহমানকে ভারত সফরে আমন্ত্রণ জানাতে প্রস্তুত বলে জানা গেছে।
গত বছরের জুলাই মাসে গণঅভ্যুত্থানের পর শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক কিছুটা উন্নত হলেও পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগে সম্পর্ক পুরোপুরি স্বাভাবিক হওয়ার কোনো ইঙ্গিত নেই। নতুন বাস্তবতায় ভারত এখন বাংলাদেশে একটি নির্বাচিত সরকারের অপেক্ষায় রয়েছে। নয়াদিল্লি দ্রুত ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের উপর গুরুত্ব দিচ্ছে এবং বিএনপিকে ভবিষ্যৎ সরকার হিসেবে বিবেচনা করছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ভারত ও বিএনপির মধ্যে পূর্বের বৈরী সম্পর্কের প্রকাশ কম দেখা গেছে। বিশেষ করে ২০০৪ সালের অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় সৃষ্ট অবিশ্বাস অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছে ভারত। **ভারতীয় কূটনীতিকের বক্তব্য** নয়াদিল্লির এক কূটনীতিক জাগো নিউজকে বলেন, “তারেক রহমানের রাজনৈতিক অবস্থানে ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। তিনি এখন অনেক পরিপক্ব। তিনি যদি সরকারপ্রধান হন, তাহলে তাকে ভারত সফরে আমন্ত্রণ জানানোর বিষয়টি আমাদের ভাবনায় রয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “ভারত বাংলাদেশে একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ দেখতে চায়। আমরা আশা করি, ফেব্রুয়ারিতে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে এই পরিবেশ প্রতিষ্ঠিত হবে।” **ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট** ২০০১-২০০৬ সালে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে নিরাপত্তা, সীমান্ত পরিস্থিতি ও সন্ত্রাসবাদের কারণে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। ২০০৪ সালের চট্টগ্রামে দশ ট্রাক অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা এই টানাপোড়েনের কেন্দ্রবিন্দু ছিল। ভারতের তৎকালীন কর্মকর্তারা দাবি করেছিলেন, অস্ত্রগুলো ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর জন্য পাঠানো হচ্ছিল। বিএনপি অবশ্য দাবি করে, সরকারের সদিচ্ছার কারণেই অস্ত্র আটক করা হয়। ২০২৩ সালে ভারতীয় গণমাধ্যম *ইন্ডিয়া টুডে*-এর সাক্ষাৎকারে ভারতের সাবেক ডিআইএ উপ-মহাপরিচালক মেজর জেনারেল গগনজিত সিং বলেন, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী তারেক রহমানের নেতৃত্বে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোর কাছে অস্ত্র সরবরাহ করত। **পরিবর্তিত গতিপথ** গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যuত্থানের পর শেখ হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর ভারত বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে মনোযোগ দিয়েছে। জামায়াতে ইসলামী ও অন্যান্য ইসলামপন্থি দলগুলোর প্রতি ভারতের উদ্বেগের কারণে বিএনপিকে তারা পছন্দের অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ বলেন, “কূটনৈতিক সম্পর্ক জাতীয় স্বার্থের ভিত্তিতে বিবেচিত হয়। ভারত বুঝতে পেরেছে যে তাদের শেখ হাসিনা-কেন্দ্রিক কূটনীতি ব্যর্থ হয়েছে। বিএনপি তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছে, যা পারস্পরিক বোঝাপড়ার পথ তৈরি করেছে।” **বিএনপির অবস্থান** বিএনপি ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে তবেজাতীয় স্বার্থ ও আত্মমর্যাদার ভিত্তিতে কৌশলী অবস্থান বজায় রাখতে চায়। গত ২২ সেপ্টেম্বর ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলের সঙ্গে বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করেন।