শুক্রবার, ১১ জুলাই, ২০২৫

ইউএনবিকে সাক্ষাৎকার: জামায়াতের সঙ্গে জোটের সম্ভাবনা নেই, জোট কী হয়, তা সময়ই বলে দেবে: সালাহউদ্দিন


বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক মিত্র বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে নির্বাচনী জোট গঠনের সম্ভাবনা সরাসরি নাকচ করে দিয়েছেন। তবে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে আলোচনার দরজা খোলা রয়েছে।

ইউএনবিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, নির্বাচন ঘিরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দাবিদাওয়া তাদের বৃহত্তর কৌশলের অংশ। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যভাগে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তিনি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা দ্রুত শেষ করার তাগিদ দিয়ে সতর্ক করেন যে, অপ্রয়োজনীয় দীর্ঘসূত্রতা নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটাতে পারে। সালাহউদ্দিন বলেন, “জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে নির্বাচনী জোটের কোনো সম্ভাবনা আমি দেখছি না। অতীতে কৌশলগত কারণে আমরা তাদের সঙ্গে জোট করেছি, কিন্তু এবার তাদের সঙ্গে জোট গঠনের প্রয়োজন অনুভব করছি না।” তিনি জানান, বিএনপি এখন মূলত সেই দলগুলোর সঙ্গে জোট ও জাতীয় সরকার গঠনে মনোযোগী, যারা একযোগে আন্দোলনে এবং গণতান্ত্রিক সংগ্রামে অংশ নিয়েছে। “এখন এর বাইরে কিছু ভাবা হচ্ছে না,” তিনি বলেন। এনসিপির সঙ্গে সম্ভাব্য জোট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত রাজনৈতিক জোট নিয়ে আলোচনা চলবে। কী হয় তা সময়ই বলে দেবে।” তিনি আরও বলেন, “সব গণতান্ত্রিক দলই নির্বাচনের আগে নানা কৌশল গ্রহণ করবে। বিএনপি শেষ পর্যন্ত কী কৌশল অবলম্বন করে এবং কার সঙ্গে জোট করে তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।” জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দীর্ঘ আলোচনার প্রতি অসন্তোষ জানিয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, “আমার মনে হয়, এই আলোচনা অপ্রয়োজনীয়ভাবে দীর্ঘায়িত হচ্ছে। যুক্তিসংগত সময়ের মধ্যেই আলোচনা শেষ হওয়া উচিত ছিল।” তিনি বলেন, “ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক পরিচালনায় কিছু ঘাটতি রয়েছে, যা পুরো প্রক্রিয়াকে সময়সাপেক্ষ করে তুলছে। আশা করি, এই আলোচনা আর বেশি দিন চলবে না। এখন একটা সারসংক্ষেপ ও সিদ্ধান্তে পৌঁছানো দরকার।” বিএনপি নেতা আরও বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা কার্যত পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখন কেবল সুপ্রিম কোর্টের রিভিউ রায়ের অপেক্ষা। “আমরা আশা করি, আপিল বিভাগ রিভিউ আবেদনে ইতিবাচক রায় দেবে,” তিনি বলেন। জনগণ নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন চায় জানিয়ে তিনি বলেন, “এই কাঠামোর রূপ কিংবা সাবেক প্রধান বিচারপতিকেই প্রধান উপদেষ্টা রাখার বিষয়টি নিয়ে এখনো বিতর্ক রয়েছে। এই বিষয়ে বিকল্প নিয়ে এখনো আলোচনা চলছে। বিএনপিসহ অন্যান্য দল এবং সংস্কার কমিশন তাদের প্রস্তাব দেবে। যদি আরও ভালো কোনো বিকল্পে একমত না হওয়া যায়, তবে বর্তমান কাঠামোই বহাল থাকবে।” আসন্ন নির্বাচনে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) ব্যবস্থা চালুর প্রস্তাবের বিরো� FLOW:ধিতা করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে এই ব্যবস্থার জন্য উপযোগী রাজনৈতিক, সামাজিক ও নির্বাচন সংস্কৃতি নেই। “পিআর ব্যবস্থায় ভোটাররা তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন, ভোটদানে নিরুৎসাহিত হন এবং সংসদে স্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে,” তিনি ব্যাখ্যা করেন। তিনি আরও বলেন, “আমাদের ভোটাররা তাদের পরিচিত ও স্থানীয় প্রার্থীকে ভোট দিতে পছন্দ করেন। কিন্তু পিআর ব্যবস্থায় এমনও হতে পারে যে, একটি এলাকায় কোনো দল বেশি ভোট পেলেও অন্য এলাকার কাউকে নির্বাচিত করা হয়। এটি জনগণের রায়কে প্রতিফলিত করে না, বরং গণতন্ত্রকে দুর্বল করে।” তিনি উল্লেখ করেন, যেসব দেশে পিআর ব্যবস্থা কার্যকর, সেখানে স্থানীয় সরকারগুলোও শক্তিশালী। কিন্তু বাংলাদেশে তা প্রযোজ্য নয়। এখানে সংসদ সদস্যরা সরাসরি উন্নয়ন প্রকল্পে যুক্ত থাকেন। “তাই এখানে পিআর কার্যকর হবে না,” তিনি বলেন। পিআর ব্যবস্থার আরেকটি সমস্যা তুলে ধরে সালাহউদ্দিন বলেন, “পিআর ব্যবস্থায় স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচনের সুযোগ হারাবেন। কেউ যদি খুব জনপ্রিয়ও হন, কিন্তু কোনো দলে না থাকেন, তাহলে তিনি নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ পাবেন না। এটি অন্যায় এবং অগণতান্ত্রিক।” তাঁর মতে, ছোট দলগুলো পিআর চায়, কারণ এতে তারা কম ভোট পেয়েও বেশি আসন পেতে পারে। কিন্তু এর ফলে দুর্বল জোট সরকার গঠিত হয় এবং দেশে শক্তিশালী নেতৃত্ব গড়ে ওঠে না। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে বিএনপির প্রতিনিধিত্বকারী এই নেতা বলেন, “পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন কোনো অবস্থাতেই বিএনপি মেনে নেবে না।” তিনি বলেন, “কিছু দল বিভিন্ন দাবি করছে। কেউ সংস্কার চায়, কেউ বলছে বিচার ছাড়া নির্বাচন নয়, কেউ পিআর চায়। এসব বিভিন্ন উদ্দেশ্যে বলা হচ্ছে। তবে আমরা আত্মবিশ্বাসী, সংবিধান অনুযায়ী আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যেই নির্বাচন হবে। কথা বলার অধিকার সবাই রাখে, তবে সেসব বক্তব্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতও হতে পারে।” সালাহউদ্দিন বলেন, “আমরা নতুন রাজনৈতিক দলগুলোকে সম্মান করি এবং তাদের জন্য শুভকামনা রাখি। কিন্তু প্রকৃত রাজনৈতিক ওজন আসে জনসমর্থন থেকে। ছোট ছোট কিছু দল বড় বড় কথা বললেও তারা খুব অল্পসংখ্যক মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে। রাজনীতিতে জনমতের মূল্য সবচেয়ে বেশি।” বিএনপির জোটসঙ্গী দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য নিয়ে তিনি বলেন, “এটি আসলে দর-কষাকষির কৌশলেরই অংশ হতে পারে, যেমন আসন ভাগাভাগি।” আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি বলেন, “আমার মতে, আওয়ামী লীগ আর কোনো রাজনৈতিক দল নয়। তারা বহু আগেই তাদের আদর্শ ও চরিত্র হারিয়েছে। তারা এখন একটি অগণতান্ত্রিক, ফ্যাসিবাদী শক্তিতে, এক ধরনের মাফিয়া সংগঠনে পরিণত হয়েছে। ১৯৭৫ সালের আগ থেকে আজ পর্যন্ত তাদের ইতিহাসে কখনো গণতন্ত্র চর্চা হয়নি। গণতন্ত্র তাদের রক্তে নেই।”

Share This Post

শেয়ার করুন

Author:

Note For Readers: The CEO handles all legal and staff issues. Claiming human help before the first hearing isn't part of our rules. Our system uses humans and AI, including freelance journalists, editors, and reporters. The CEO can confirm if your issue involves a person or AI.