বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

নূরের ওপর হামলার বিচার না হলে ভয়াবহ পরিণতির হুঁশিয়ারি এবি পার্টির, জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধের দাবি

আহত গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূরের ওপর হামলার বিচার না হলে অন্তর্বর্তী সরকারের ভয়াবহ পরিণতি হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ।

বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নূরকে দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব মন্তব্য করেন।

“নুর শুরু, নুরে শেষ হবে না”—হুঁশিয়ারি ফুয়াদের

ব্যারিস্টার ফুয়াদ বলেন,
“ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার আগে নিজেদের গলার রশিটার যত্ন নিতে হবে। মাথায় রাখবেন—নুর শুরু, নুর দিয়ে শেষ হবে না।”

তিনি অভিযোগ করেন, গত সপ্তাহে যৌথবাহিনী ও পুলিশ নুরুল হকের ওপর নির্মম হামলা চালিয়েছে জাতীয় পার্টির অফিসের সামনে ও তার ব্যক্তিগত কার্যালয়ের বাইরে। হামলায় নুর গুরুতর আহত হয়েছেন—নাকের হাড় ভেঙে গেছে, দম নিতে কষ্ট হচ্ছে, মুখ দিয়ে শ্বাস নিতে হচ্ছে। ঘুমাতে পারছেন না। ওটি করে রক্ত পরিষ্কার করতে হয়েছে।

ফুয়াদ জানান, একই হামলায় ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসানও গুরুতর আহত হয়েছেন। তার কোমরের হাড় ডিসপ্লেস হয়ে গেছে, হাঁটতে পারছেন না। চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে রয়েছেন তিনিও।

“বিচার না হলে উপদেষ্টাদের লাশ পড়বে”

বিস্ফোরক অভিযোগ করে ফুয়াদ বলেন,
“যদি দৃষ্টান্তমূলক বিচার না হয়, তবে অনেক উপদেষ্টার নাম ইতোমধ্যেই এসাসিনেশনস প্ল্যানের তালিকায় আছে। তাদের লাশও কয়েকদিন পর পড়বে। তখন বিচার করার মতো মানুষও থাকবে না।”

তিনি বলেন,
“আমরা খুব হতাশ। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা গণঅভ্যুত্থান ব্যর্থ করতে যা যা করা দরকার, সব করছেন। আজ যা হচ্ছে, তা আসলে আগের আওয়ামী লীগের সময়েরই পুনরাবৃত্তি—গুম, খুন, বিচারহীনতা।”

‘জাতীয় পার্টি জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি’

ফুয়াদ আরও দাবি করেন, সম্প্রতি তার দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক সাকিব রহমানকে কোনো নোটিশ ছাড়াই বরখাস্ত করা হয়। পরবর্তীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের স্বীকার করেন, এটি ভারতীয় হাইকমিশনের নির্দেশে করা হয়েছে।

ফুয়াদের ভাষায়,
“যদি ভারতের নির্দেশে একটি দলের নেতা বরখাস্ত হয়, তাহলে সেই দল বাংলাদেশের দল হতে পারে না। তারা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি।”

তিনি বলেন, আশির দশক থেকেই জাতীয় পার্টি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পক্ষে নয়, বরং বিপক্ষে কাজ করে আসছে। এরশাদ থেকে শুরু করে তারা সবসময় আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের ভূমিকা রেখেছে।

“জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করতে হবে”

জাতীয় পার্টির নিষিদ্ধ প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার ফুয়াদ বলেন,
“শুধু আওয়ামী লীগ বা শেখ হাসিনা মিলে গত ১৬ বছর ধরে দিল্লির আধিপত্যবাদ প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। জাতীয় পার্টিই ছিল প্রধান হাতিয়ার।”

তিনি দাবি করেন,
“২০১৪ সালে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব সুজাতা সিং এসে কীভাবে জাতীয় পার্টিকে দিয়ে নির্বাচন করিয়েছেন, তা দেশবাসী জানে। ২০১৮ হোক বা ২০২৪ সালের ডামি নির্বাচন—প্রতিটিতেই এই দল ছিল মূল অংশীদার।”

জিএম কাদের সম্পর্কে ফুয়াদের মন্তব্য,
“জিএম কাদের আপাদমস্তক ভারতপন্থী। তার দলের কার্যক্রমও তাই বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী।”

‘এস আলম-শেখ হাসিনা বৈঠকে এসাসিনেশন পরিকল্পনা’

সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগটি এসেছে একটি ষড়যন্ত্রের প্রসঙ্গে। ব্যারিস্টার ফুয়াদ বলেন,
“আমরা খবর পাচ্ছি—এস আলম ও শেখ হাসিনার এক বৈঠকে বাংলাদেশে নির্বাচনের আগে হাইপ্রোফাইল এসাসিনেশনের পরিকল্পনা হয়েছে। এর সঙ্গে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’, দিল্লি ও আওয়ামী লীগ যুক্ত।”

তিনি দাবি করেন, দিল্লির আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে যারা কথা বলছে, তাদের টার্গেট করা হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের অনেকের নাম সেই তালিকায় রয়েছে।

‘স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সম্পূর্ণ ব্যর্থ’

এবি পার্টির এই নেতা বলেন,
“২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলার ঘটনায় জড়িতদের স্ট্যান্ড রিলিজ করা উচিত ছিল। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সম্পূর্ণ অযোগ্য, ইউজলেস—তাকে ফেলে দেওয়া উচিত ছিল।”

ফুয়াদের দাবি, সেনাবাহিনীর ভেতরেও ‘আয়না ঘর’ নামক এক ক্রিমিনাল নেটওয়ার্ক সক্রিয় আছে, যারা জাতীয় পার্টির সঙ্গে যোগসাজশে এই ষড়যন্ত্রে যুক্ত।


সংক্ষিপ্তভাবে যা বললেন ব্যারিস্টার ফুয়াদ:

  • নূরের ওপর হামলা বিচ্ছিন্ন নয়, এটি বড় ষড়যন্ত্রের অংশ

  • জাতীয় পার্টি স্বাধীনতা-বিরোধী, নিষিদ্ধ করা উচিত

  • ভারতের নির্দেশে জাতীয় পার্টি নেতা বরখাস্ত, যা জাতীয় নিরাপত্তার হুমকি

  • নূর ও নাজমুলের ওপর যৌথবাহিনীর হামলায় কোনো ব্যবস্থা নেই

  • এস আলম-শেখ হাসিনা বৈঠকে এসাসিনেশনের পরিকল্পনার অভিযোগ

  • স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অযোগ্য, সেনাবাহিনীতে অপরাধী নেটওয়ার্ক সক্রিয়ফু

ফুয়াদের বক্তব্য ও অভিযোগ ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। এখন দেখার বিষয়, অন্তর্বর্তী সরকার এসব দাবির বিষয়ে কী প্রতিক্রিয়া জানায়।

Share This Post

শেয়ার করুন

Author:

Note For Readers: The CEO handles all legal and staff issues. Claiming human help before the first hearing isn't part of our rules. Our system uses humans and AI, including freelance journalists, editors, and reporters. The CEO can confirm if your issue involves a person or AI.