জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গোপালগঞ্জে সৃষ্ট ‘উন্মত্ত পরিস্থিতি’র জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেই দায়ী মনে করে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) সিপিবির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্সের যৌথ বিবৃতিতে এই অভিযোগ উত্থাপিত হয়। তারা গোপালগঞ্জে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড ও সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে জড়িতদের বিচার এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে গত বুধবার (১৬ জুলাই) গোপালগঞ্জে এনসিপির ‘জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সংঘটিত হামলা ও হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানানো হয়। সিপিবি অভিযোগ করেছে, আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এনসিপির সমাবেশে হামলা চালিয়েছে, এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাড়ি, ইউএনওর গাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। এই ঘটনায় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত চারজন নিহত এবং অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে রমজান কাজী (২৪), সোহেল রানা (৩৫), ইমন তালুকদার (১৬) এবং দীপ্ত সাহার নাম জানা গেছে।
সিপিবির নেতারা বলেন, “সরকার এনসিপির সমাবেশের নিরাপত্তা বিধানে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। বরং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে কয়েকজন নিহত হয়েছেন, যা ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। এ ধরনের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও হামলা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে পারে।” তারা আরও উল্লেখ করেন, এই ঘটনা গণতান্ত্রিক অধিকার, মানবাধিকার এবং নাগরিক নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি।
বিবৃতিতে সিপিবি সরকারের ‘দায়িত্বহীনতা’র সমালোচনা করে বলেছে, “এ ধরনের ঘটনা বাংলাদেশের গণতন্ত্রের নবযাত্রাকে বিপন্ন করতে পারে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো পূর্বপরিকল্পিত হামলার বিষয়ে আগাম তথ্য পেয়েও কোনো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়নি।” তারা সরকারের কাছে অবিলম্বে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত এবং দায়ীদের বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বুধবার রাত ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গোপালগঞ্জে ২২ ঘণ্টার কারফিউ জারি করা হয়। সেনাবাহিনী, র্যাব ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে, এবং এ পর্যন্ত ২৫ জনকে আটক করা হয়েছে। গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান জানিয়েছেন, “বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক রয়েছে।”
সিপিবি রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়িত্বশীল আচরণের আহ্বান জানিয়ে বলেছে, “পরাজিত ফ্যাসিস্ট ও প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির উসকানি ও ষড়যন্ত্র সম্পর্কে দেশবাসীকে সতর্ক থাকতে হবে।” তারা জনগণের প্রতি ধৈর্য ও সংযমের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলার আহ্বান জানিয়েছে।
এদিকে, এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ঘটনাটিকে ‘পূর্বপরিকল্পিত সন্ত্রাসী হামলা’ আখ্যায়িত করে সরকারের কাছে হামলাকারীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ ও মুজিববাদীরা গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি করতে চায়। আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে গিয়েছিলাম, কিন্তু তারা পরিকল্পিতভাবে আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে।”
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এ ঘটনায় জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং তদন্তের জন্য তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে, যাকে দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।