বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, কিছু মহল পরিকল্পিতভাবে ফাঁদ পেতে উসকানি দিচ্ছে, যাতে বিএনপি সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে এবং গণতন্ত্রের উত্তরণ ব্যাহত হয়। তিনি বলেন, “এরা ফাঁদ পাতছে। আমাদের প্রভোক (উসকানি) করছে, আমরা যেন ঝাঁপিয়ে পড়ি, প্রতিবাদ করি, কনফ্রন্টেশন করি, যেন গণতন্ত্রের উত্তরণটা ব্যাহত হয়। এই ফাঁদে পা দেব না।”
বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে জুলাই-আগস্টের ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানে বীর শহীদদের স্মরণে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আয়োজিত এক স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ফ্যাসিবাদ এখনো শেষ হয়নি
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশ ফ্যাসিস্টমুক্ত হওয়ার পর নতুন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, “ষড়যন্ত্র থেমে নেই। ফ্যাসিবাদ এখনো শেষ হয়ে যায়নি। গণতন্ত্রের উত্তরণ রুখতে পরিকল্পিতভাবে কাজ শুরু হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, সামাজিক মাধ্যমে এবং বিভিন্নভাবে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে, বিশেষ করে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অশ্লীল ও অশ্রাব্য ভাষায় কথা বলা হচ্ছে।
তিনি এর কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন, “ভয়ে এসব করা হচ্ছে। তারা ভয় পেয়েছে। তারেক রহমান জাতীয় নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছেন। তিনি ফিরে এলে তারা কোথায় যাবে? তাদের আশ্বাস দিতে পারি, তারা সঠিক জায়গায় থাকবে।”
নির্বাচন নিয়ে গোলমাল
নির্বাচনের বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বৈঠকে নির্বাচনের বিষয়টি ঠিক হওয়ার পরই গোলমাল শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, “নির্বাচন হতে দেওয়া যাবে না বলে এই গোলমাল। কিন্তু এ দেশের মানুষ সবসময় সংগ্রাম ও লড়াই করে তাদের দাবি আদায় করেছে।”
তিনি দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, “আমরা চাই বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক সাম্য তৈরি হোক, মানুষ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করুক। সংস্কারের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা প্রায় একমত হয়েছি। ধৈর্যহারা হবেন না, উত্তেজিত হবেন না, কোনো ফাঁদে পা দেবেন না।”
অন্যান্য বক্তার মন্তব্য
স্মরণসভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, “ফ্যাসিবাদ এখনো যায়নি। নির্বাচন ঠেকাতে ষড়যন্ত্র চলছে। বিএনপি কারও ফাঁদে পা দেবে না।”
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির রিজভী গোপালগঞ্জের ঘটনাকে পরিকল্পিত উল্লেখ করে বলেন, “এটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। নির্বাচন হলে অনেকে জামানত হারাবে, তাই নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে।”
বিএনপির আরেক যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান বলেন, “ঐক্যের স্বার্থে অনেক কিছু হজম করছি। যা মুখে আসবে, তা বলা যাবে না।”
স্মরণসভার আয়োজন
স্মরণসভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান খান রিপন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশাররফ হোসেন, তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজীজুল বারী হেলাল, সহপ্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান প্রমুখ।
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলামের সভাপতিত্বে স্মরণসভা সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন। সভার শুরুতে জুলাই-আগস্টে শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।