শনিবার, ২৬ জুলাই, ২০২৫

আল-জাজিরার তথ্যচিত্রে সাদিক কায়েমের সাক্ষাতকার নিয়ে সমালোচনার ঝড়

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা সম্প্রতি ‘জুলাইয়ের ৩৬ দিন: উন্মোচিত হচ্ছে শেখ হাসিনার গোপন আদেশনামা’ শিরোনামে একটি তথ্যচিত্র প্রকাশ করেছে। এই তথ্যচিত্রে ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশে সংঘটিত ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া গোপন নির্দেশনার ভয়াবহ বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, শেখ হাসিনা আন্দোলন দমনে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন, যার ফলে ১,৪০০-এর বেশি মানুষ নিহত ও ১০,০০০-এর বেশি আহত হন।

তথ্যচিত্রটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি সাদিক কায়েমের সাক্ষাতকার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম এবং বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার সাক্ষাতকার না থাকায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে মনে করছেন, সাদিক কায়েমকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, যিনি আন্দোলনের সময় সাধারণ মানুষের কাছে তেমন পরিচিত ছিলেন না।

গত শুক্রবার দুপুরে এএইচএম শাহীন নামে এক ব্যক্তি ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসে এই তথ্যচিত্রের সমালোচনা করে বলেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ফ্রন্ট লাইনারের মধ্যে নাহিদ ছিলেন একমাত্র দৃশ্যমান আপসহীন চরিত্র। ‘সমন্বয়ক’ পরিচয়ের মধ্যে নাহিদ হয়ে উঠেছিলেন অন্যদের আইকন ক্যারেক্টার। সাদিক কায়েম শিবির পরিচয়ে আত্মপ্রকাশের আগে আমি তাকে চিনতাম না। এটা আমার জানাশোনার সীমাবদ্ধতা নয়। আমার মতো দেশের হাজার হাজার অভ্যুত্থানপন্থি জনতা আন্দোলনে সাদিক নামে কিছু আছে জানতেন না।” তিনি আরও বলেন, “সমস্যা হলো আল-জাজিরা আর সামিরের। আল-জাজিরার পুরো ডকুমেন্টারিতে কৌশলগতভাবে জুলাইয়ের মেইনস্ট্রিম হিসেবে সাদিককে সামনে আনা হয়েছে। ব্যালেন্স করার জন্য আল-জাজিরা নাহিদকে রিচ করতে পারলো না। নেতৃত্বের মধ্যে সবচেয়ে বড় দুই সার্ভাইবার নাহিদ-আসিফের একটা সাক্ষাতকার নেওয়া গেল না।”

শাহীনের এই স্ট্যাটাসের পক্ষে-বিপক্ষে নেটিজেনদের মধ্যে নানা মন্তব্য দেখা গেছে। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি নাজিফা জান্নাত এই স্ট্যাটাস শেয়ার করে নিজের ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, “আল-জাজিরার এই রিপোর্ট সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের কষায়ে থাপড়ানো উচিৎ। আই মিন সিরিয়াস জবাবদিহিতার মধ্যে আনা উচিৎ। ছাত্রলীগের আমব্রেলার নিচে ঘাপটি মেরে থাকা সাদিক কায়েম নাকি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের কি ফিগার। শেইম!” তবে নাজিফার বক্তব্য জানতে তার মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।

এদিকে, সামাজিক মাধ্যমে কেউ কেউ সাদিক কায়েমের সাক্ষাতকারকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের একটি শক্তি হিসেবে মেনে নিলেও আল-জাজিরার প্রতিবেদনের ভারসাম্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, “হাসিনার জুলাইয়ের ৩৬ দিন নামে আল-জাজিরার প্রতিবেদনে অনেক নতুন তথ্য উঠে এসেছে। তবে সাদিক কায়েমকে অত্যধিক ফোকাস দেওয়া হয়েছে, যা চোখে লাগার মতো।”

আল-জাজিরার তথ্যচিত্রটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার উপর আলোকপাত করলেও এর উপস্থাপনা এবং সাক্ষাতকারের নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এই বিতর্ক আন্দোলনের নেতৃত্ব এবং এর প্রকৃত নায়কদের নিয়ে নতুন করে আলোচনার সূত্রপাত করেছে।

Share This Post

শেয়ার করুন

Author:

Note For Readers: The CEO handles all legal and staff issues. Claiming human help before the first hearing isn't part of our rules. Our system uses humans and AI, including freelance journalists, editors, and reporters. The CEO can confirm if your issue involves a person or AI.