সোমবার, ৭ জুলাই, ২০২৫

জাতীয় পার্টিতে ‘ছাঁটাই রাজনীতি’: মহাসচিব বদলসহ ৭ দিনে ১১ নেতাকে অব্যাহতি

জাতীয় পার্টির (জাপা) কেন্দ্রীয় সম্মেলনকে ঘিরে উত্তেজনার মধ্যে সোমবার চেয়ারম্যান জি এম কাদের তিন জ্যেষ্ঠ নেতাকে প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। তাঁরা হলেন জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার এবং মহাসচিব মো. মুজিবুল হক (চুন্নু)। এছাড়া, মুজিবুল হককে বাদ দিয়ে কো-চেয়ারম্যান শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে নতুন মহাসচিব নিযুক্ত করেছেন তিনি। গত এক সপ্তাহে মোট ১১ নেতাকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, যাকে দলের একাংশ ‘ছাঁটাই রাজনীতি’ হিসেবে আখ্যা দিচ্ছে।

অব্যাহতি পাওয়া তিন নেতার বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে তাঁরা বলেছেন, চেয়ারম্যান জি এম কাদের দলের গঠনতন্ত্রের ২০/১/ক ধারার ক্ষমতাবলে তাঁদের অব্যাহতি দিয়েছেন, যা তাঁরা চ্যালেঞ্জ করবেন এবং এই স্বেচ্ছাচারী ধারার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেবেন। তাঁরা মনে করেন, এই অব্যাহতি ও মহাসচিব নিয়োগ অগণতান্ত্রিক, গঠনতন্ত্রের লঙ্ঘন এবং এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক স্বেচ্ছাচারিতার বহিঃপ্রকাশ।

সোমবার বিকেলে দলের কেন্দ্রীয় দপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জি এম কাদের গঠনতন্ত্রের ক্ষমতাবলে মুজিবুল হককে অব্যাহতি দিয়ে শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে মহাসচিব নিয়োগ দিয়েছেন। পাটোয়ারী চেয়ারম্যানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে দলকে সংগঠিত করতে সবার সহযোগিতা চেয়েছেন। পরে আরেক বিজ্ঞপ্তিতে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, রুহুল আমিন হাওলাদার ও মুজিবুল হককে অব্যাহতির কথা জানানো হয়। অব্যাহতির কারণ হিসেবে ২৫ জুনের জেলা ও মহানগর কমিটির সভা এবং ২৮ জুনের প্রেসিডিয়াম সভার সিদ্ধান্তের উল্লেখ করা হয়। রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, “৪০ বছর ধরে দল করছি, ৩৫টি মামলা খেয়েছি, জেল খেটেছি, তবু দল ছাড়িনি। আমরা বলেছি, আপনি নেতৃত্বে থাকুন, কিন্তু ২০/১/ক ধারা সংশোধন করে গণতান্ত্রিক চর্চা ও যৌথ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করুন। তিনি রাজি না হয়ে আমাদের অব্যাহতি দিয়েছেন। এমন নীতিহীন দল দেশে আর নেই।” দলের নেতা-কর্মীরা বলছেন, এ ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার আগে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া প্রয়োজন, যা করা হয়নি। গুরুত্বপূর্ণভাবে, জাতীয় সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর (বর্তমানে স্থগিত) চেয়ারম্যান কোনো উচ্চপর্যায়ের নেতাকে অব্যাহতি দিতে পারেন না। অব্যাহতি পাওয়া দুই নেতা সম্মেলনে চেয়ারম্যান ও মহাসচিব পদে প্রার্থিতা ঘোষণা করেছিলেন, ফলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরাতে তাঁদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। মূলত ২০/১/ক ধারা সংশোধনের দাবি ও সম্মেলন স্থগিত করা নিয়ে দলে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, রুহুল আমিন হাওলাদার ও মুজিবুল হক চেয়ারম্যানের একচ্ছত্র ক্ষমতার এই ধারা সংশোধনের দাবি জানান। জি এম কাদের ও তাঁর সমর্থকরা এটাকে নেতৃত্ব থেকে সরানোর ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে আরও আট নেতাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তাঁরা হলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য মোস্তফা আল মাহমুদ, নাজমা আকতার, নাছির ইউ মাহমুদ, জসিমউদ্দিন ভূঁইয়া, আরিফুর রহমান খান, জহিরুল ইসলাম জহির, সোলায়মান আলম শেঠ এবং কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক (২) এম এ রাজ্জাক খান। একটি সূত্র জানায়, ২৭ অক্টোবরের প্রেসিডিয়াম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এক বছরের চাঁদা বকেয়া থাকায় এই সাতজন বাদ পড়েছেন। আনিসুল ইসলাম মাহমুদ দাবি করেন, প্রেসিডিয়াম সভায় চেয়ারম্যানের আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। জবাবদিহি এড়াতে তিনি এই পদক্ষেপ নিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমরা দলে গণতন্ত্র ও সমন্বিত নেতৃত্ব চাই। ২০/১/ক ধারা বদলাতে হবে, কারণ এটি অসাংবিধানিক ও অগণতান্ত্রিক। জি এম কাদের তা বদলাতে চান না।” অব্যাহতির আগে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও রুহুল আমিন হাওলাদার শামীম হায়দার পাটোয়ারীর মহাসচিব নিয়োগের বিরুদ্ধে বিবৃতি দেন। তাঁরা এটিকে অগণতান্ত্রিক ও গঠনতন্ত্রের লঙ্ঘন বলে অভিযোগ করেন এবং মুজিবুল হককেই বৈধ মহাসচিব বলে দাবি করেন। তাঁরা বলেন, জাতীয় সম্মেলন ঘোষণার পর কোনো নিয়োগ বা অব্যাহতি বেআইনি।
এই পরিস্থিতিতে আনিসুল ইসলাম মাহমুদেরা মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন। জি এম কাদেরের সমর্থকরাও পরদিন সংবাদ সম্মেলন করে তাঁদের অবস্থান তুলে ধরবেন।

Share This Post

শেয়ার করুন

Author:

Note For Readers: The CEO handles all legal and staff issues. Claiming human help before the first hearing isn't part of our rules. Our system uses humans and AI, including freelance journalists, editors, and reporters. The CEO can confirm if your issue involves a person or AI.