গত ৯ জুলাই এ হত্যাকাণ্ড ঘটলেও শুক্রবার (১১ জুলাই) ঘটনার ভিডিও ও ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যা দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় তুলেছে। ভয়াবহ এ দৃশ্যের প্রতিবাদে সাধারণ মানুষ, নাগরিক সমাজ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক মহল থেকে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়।
এ ঘটনার পর শুক্রবার থেকে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ ও মিছিল বের করেন। নৃশংস এ ঘটনার প্রতিবাদে এবং দায়ীদের বিচারের দাবিতে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মধ্যেও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। সংগঠনের প্রতি ক্ষোভ ও হতাশা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৯ জন নেতাকর্মী পদত্যাগ করেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারদা সূর্যসেন হল শাখা ছাত্রদলের কর্মী মোহাম্মদ আবু সায়ীদ শনিবার (১২ জুলাই) সকালে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। তিনি বিএনপির পরিবারতান্ত্রিক কাঠামো, নিয়মিত কাউন্সিলের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন না হওয়া এবং দলে গণতন্ত্রের অভাবের অভিযোগ তুলেন।
আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ লিসানুল আলম লিসান শুক্রবার (১১ জুলাই) দিবাগত রাত ১২টা ১৬ মিনিটে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে পদত্যাগ করেন। তিনি লেখেন, “জন্মলগ্ন থেকে পারিবারিক রাজনীতির সূত্র ধরে দীর্ঘ ১০ বছরের ঊর্ধ্বে এই দলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম। যেদিন প্রকৃত স্বচ্ছ বাংলাদেশ বিনির্মানের ডাক আসবে, সেদিন আপনাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমিও থাকব মিছিলের অগ্রভাগে, প্রথম বুলেটের শিকারী হতে। তবুও এ দেশের বুকে শান্তি ফিরে আসুক। বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।”
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সদস্য পারভেজ রানা প্রান্ত বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের নীতিবহির্ভূত কাজের প্রতিবাদে পদত্যাগ করেছেন। তিনি লেখেন, “ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে আমি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক সদস্য পদ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম বর্ষ থেকে আমি ছাত্রদলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম। সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্রদল ও বিএনপির অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের নীতিবহির্ভূত কাজের জন্য আমি মানসিকভাবে অস্বস্তিবোধ করি।”
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক আহ্বায়ক সদস্য রাকিবুল হাসান রানা শনিবার (১২ জুলাই) ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। তিনি লেখেন, “জুলাই বিপ্লবের পর বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতিতে যে পরিবর্তনের প্রত্যাশা করেছিলাম, তা এখনো চোখে পড়েনি। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমি চরমভাবে আশাহত ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।”
সরকারি বাঙলা কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি রাসেল মিয়া শনিবার (১২ জুলাই) ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে পদত্যাগ করেন। তিনি লেখেন, “আমি নিজের পরিশ্রমের ফল নিজের মতো করে খেতে চাই। তোদের মতো কিছু সুবিধাভোগী নেতার কারণে বাবা-মায়ের মুখে গালি শুনে আর গুনাহ কামাতে চাই না।”
এ ছাড়া পদত্যাগ করেছেন মৌলভীবাজার জেলা শাখার সদস্য মুহাম্মাদ রাব্বি মিয়া, গোপালগঞ্জ মেডিকেল কলেজ ছাত্রদলের সিনিয়র সহসভাপতি মো. জাহিমুর রহমান জিসান, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ইশতিয়াক রহমান এবং সিলেটের চুনারুঘাট ছাত্রদল ৯ নম্বর রানীগাঁও শাখার সহসভাপতি আরিফুল ইসলাম ইমরুল।