রবিবার, ১৭ আগস্ট, ২০২৫

জুলাই ঘোষণা ও সনদের আইনি ভিত্তি নিয়ে জামায়াতের জাতীয় সেমিনার

 বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে রাজধানীর রমনাস্থ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে “জুলাই ঘোষণা এবং জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রদান ও আমাদের করণীয়” শীর্ষক জাতীয় সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মাদ শিশির মনির।

সেমিনারে জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য অধ্যাপক ডা. কর্নেল (অব.) জেহাদ খান বলেন, “শেখ হাসিনাই পৃথিবীর প্রথম নারী স্বৈরাচার। আমরা ইতিহাসে ফেরাউন, নমরুদ, স্ট্যালিনের মতো স্বৈরাচারের নাম শুনেছি, কিন্তু এমন কোনো নারী স্বৈরাচারের নাম শুনিনি। একজন নারী হিসেবে শেখ হাসিনা যা করেছেন, ইতিহাসে এর কোনো নজির নেই। সংবিধানের দোহাই দিয়ে তিনি নানা অপকর্ম করেছেন।” তিনি আরও বলেন, “গণআন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচারকে হঠানোর নজির বিশ্বে খুবই কম। জনতার আন্দোলনে ফ্যাসিবাদকে হটানো অত্যন্ত কঠিন। আমার যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বড় ভাই জানিয়েছেন, বিভিন্ন দেশের মানুষ তাকে জিজ্ঞাসা করে, তোমরা কীভাবে এটা করতে পারলে? বিশ্ববাসীর সামনে আমরা একটি নজির স্থাপন করেছি, এটি আমাদের বিরাট অর্জন। এই অর্জন ধরে রাখতে হলে জুলাই সনদকে আইনি স্বীকৃতি দিতে হবে। অন্যথায় শহীদ আবু সাঈদ, মীর মুগ্ধসহ অসংখ্য শহীদদের ত্যাগ ব্যর্থ হয়ে যাবে এবং স্বৈরাচার ফিরে আসার আশঙ্কা থাকবে।”

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, “বিগত ৫৪ বছরে নেতৃবৃন্দের ব্যর্থতার কারণেই ফ্যাসিবাদীরা ক্ষমতায় এসেছিল। জনগণের আন্দোলনের ফলে ফ্যাসিবাদী সরকার দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। ফ্যাসিবাদ যাতে ক্ষমতায় ফিরতে না পারে, সেজন্য পিআর (প্রোপোর্শনাল রিপ্রেজেন্টেশন) পদ্ধতিতে নির্বাচন প্রয়োজন। আইনসভার দুই কক্ষে এই পদ্ধতি চালু করতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “জুলাই বিপ্লবের পর জনগণ যাদের ক্ষমতায় বসিয়েছিল, তারাও এখন ফ্যাসিবাদের সঙ্গে আপস করছে। দেশকে ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্ত করতে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রয়োজন। যারা তড়িঘড়ি নির্বাচন চায়, তারা সুষ্ঠু নির্বাচন চায় না। প্রধান উপদেষ্টা বলেছিলেন, আগে সংস্কার ও বিচার, তারপর নির্বাচন। আমরাও তাই বলছি। কিন্তু সংস্কার ও বিচার ছাড়া এবং জুলাই ঘোষণা ও সনদ বাস্তবায়ন না করে নির্বাচন চাওয়া মানে ফ্যাসিবাদ কায়েম করা।” তিনি জানান, “দেশের ৭১ শতাংশ মানুষ পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চায়। জুলাই সনদ ও ঘোষণাকে আইনি মর্যাদা দিতে হবে। পিআর পদ্ধতি ছাড়া নির্বাচন হলে ফ্যাসিবাদ ফিরে আসবে।”

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, “জুলাই ঘোষণা অসম্পূর্ণ। রাজনৈতিক দল ও জনগণের দাবি অনুযায়ী এটিকে পূর্ণাঙ্গ করতে হবে এবং জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দিতে হবে। এটি না হলে ভবিষ্যৎ সরকার এটি মানবে না। ইতোমধ্যে একটি দলের নেতা বলেছেন, ক্ষমতায় গেলে তারা সব মুছে ফেলবেন।”

জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, “জুলাই সনদ বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রিতা দেখা যাচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত জুলাই ঘোষণা আশাব্যঞ্জক নয়। জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে বর্তমান সংবিধান পরিবর্তন করে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে। পুরনো সংবিধানে ফ্যাসিবাদ ঠেকানো যাবে না।”

সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা আশরাফ আলী আকন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মাওলানা জালাল উদ্দিন, এলডিপির ড. নিয়ামুল বশির, গণঅধিকার পরিষদের ফারুক হাসান, জামায়াতের মাওলানা এটিএম মাছুম, ড. হামিদুর রহমান আযাদ, সাবেক জেলা জজ ইকতেদার আহমেদ, অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, নূরুল ইসলাম বুলবুল, মো. সেলিম উদ্দিন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাসান নাসির, জাতীয় প্রেসক্লাবের আইয়ুব ভূঁইয়া, ছাত্রশিবিরের নুরুল ইসলাম সাদ্দাম প্রমুখ।


Share This Post

শেয়ার করুন

Author:

Note For Readers: The CEO handles all legal and staff issues. Claiming human help before the first hearing isn't part of our rules. Our system uses humans and AI, including freelance journalists, editors, and reporters. The CEO can confirm if your issue involves a person or AI.