বুধবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ডাকসু নির্বাচনে শিবিরের প্রচারে সাদিক কায়েম কেন্দ্রীয় ভূমিকায়

 জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করে ইসলামী ছাত্রশিবির। গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে এই কার্যক্রম দৃশ্যমান হলেও, জানা যায়, নেপথ্যে থেকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় বিভিন্ন কর্মসূচি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন মো. আবু সাদিক কায়েম। তিনি তখন ছিলেন শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি। বর্তমানে তিনি সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রকাশনা সম্পাদক।

গত এক বছরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাদিক কায়েম ব্যাপক পরিচিতি অর্জন করেছেন। এই পরিচিতি কাজে লাগিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে চাইছে শিবির। তাদের প্যানেলের নাম ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’। এই প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) পদে প্রার্থী সাদিক কায়েম। তাঁকে কেন্দ্র করে শিবির তাদের প্রচারণা পরিচালনা করছে। সংগঠনটির দাবি, জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে সাদিক কায়েমের ভূমিকা আলোচিত হওয়ায় তাঁর পরিচিতি সংগঠনের বাইরেও বিস্তৃত হয়েছে। তাঁর যোগাযোগ দক্ষতা এবং গত এক বছরে অনিয়মে জড়ানোর কোনো অভিযোগ না থাকায় তাঁকে প্রচারের কেন্দ্রে রাখা হয়েছে।

প্রচারণার কৌশল

শিবিরের প্রার্থীরা অনলাইনের পাশাপাশি বিভিন্ন আবাসিক হলে সশরীরে প্রচার চালাচ্ছেন। তারা নিয়মিত বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে যাচ্ছেন। ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ নামে ফেসবুক পেজ খুলে নিয়মিত ভিডিও ও ছবি পোস্ট করছে শিবির। এসব প্রচারণায় সাদিক কায়েমের উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি লক্ষণীয়। এছাড়া, ডাকসুর বিভিন্ন সম্পাদকীয় পদে শিবিরের প্রার্থীদের কার্যক্রমও তুলে ধরা হচ্ছে।

অনাবাসিক শিক্ষার্থী এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর চেষ্টা করছে শিবিরের প্যানেল। তারা দাবি করছে, গত এক বছরে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন কল্যাণমূলক কাজের মাধ্যমে তারা একটি ‘ভোটব্যাংক’ তৈরি করেছে। মাদ্রাসা থেকে আসা শিক্ষার্থী এবং কোচিংয়ের মাধ্যমে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের একটি অংশের ভোট পাওয়ার ব্যাপারে তারা আশাবাদী। এর ফলে তারা অন্য প্যানেলের তুলনায় কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে বলে মনে করছে।

ছাত্রীদের জন্য প্রতিশ্রুতি

ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রী ভোটাররা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। মোট ভোটারের প্রায় ৪৮ শতাংশ ছাত্রী, অর্থাৎ ১৮ হাজার ৯৫৯ জন। তবে, ক্যাম্পাসে আলোচনা রয়েছে যে, শিবির নির্বাচিত হলে নারীদের চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ হতে পারে। এই আলোচনার মধ্যেও শিবির তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ছাত্রীদের জন্য সাতটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এগুলো হলো:

  1. ছাত্রীদের জন্য নিরাপদ পরিবহন নিশ্চিত করা।

  2. ছাত্রী হলে প্রবেশের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ শিথিল করা।

  3. মাতৃত্বকালীন ছুটির বিধান কার্যকর করা।

  4. একাডেমিক ভবনে বিনামূল্যে মেন্সট্রুয়াল হাইজিন প্রোডাক্ট সরবরাহ।

  5. ছাত্রীদের জন্য সেলফ ডিফেন্স প্রশিক্ষণের আয়োজন।

  6. যৌন হয়রানি ও সাইবার বুলিং প্রতিরোধে ‘জিরো টলারেন্স নীতি’ বাস্তবায়ন।

  7. কমনরুমে নারী কর্মচারী নিয়োগ, ব্রেস্ট ফিডিং রুম ও চাইল্ড কেয়ার কর্নার স্থাপন।

ভোটের সমীকরণ

ক্যাম্পাসে আলোচনা রয়েছে, ১৮টি হল সংসদের নির্বাচনে শিবির কৌশলী অবস্থান নিয়েছে। দলীয় প্যানেল না দিয়ে তারা পছন্দের প্রার্থীদের বিভিন্নভাবে সমর্থন দিচ্ছে। তবে, জগন্নাথ হলের ভোট শিবিরের পক্ষে যাবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই হলে মোট ভোটারের ৬ শতাংশ, অর্থাৎ ২ হাজার ২২২ জন ভোটার রয়েছেন, যারা সবাই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। শিবিরের ইশতেহারে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য আলাদা কোনো প্রতিশ্রুতি নেই। শুধু উল্লেখ করা হয়েছে, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদ, মন্দির ও অন্যান্য উপাসনালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন করবে।

শিবিরের প্যানেলের জিএস প্রার্থী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদ বলেন, “আমাদের প্যানেলের শক্তি হচ্ছে অন্তর্ভুক্তি। মুসলিম-অমুসলিম, বাঙালি-অবাঙালি, হিজাবি-নন হিজাবি, শিবিরের পক্ষে ও সমালোচক—সবাই আমাদের প্যানেলে আছেন।”

অভিযোগ ও চ্যালেঞ্জ

প্রচারণার বিভিন্ন পর্যায়ে শিবিরের প্যানেল অভিযোগ করেছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি ছাত্র সংগঠনের প্রতি পক্ষপাত দেখাচ্ছে। তাদের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও সাইবার বুলিংয়ের ঘটনাও ঘটছে। শিবিরের এজিএস প্রার্থী মুহা. মহিউদ্দীন খান বলেন, “চ্যালেঞ্জ হচ্ছে নির্বাচনে সমান সুযোগ নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। আচরণবিধি লঙ্ঘন হচ্ছে, কিন্তু ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। আমাদের বিরুদ্ধে কৃত্রিমভাবে হিংসা বা ক্রোধ তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে।”

ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রীদের ভোট এবং জগন্নাথ হলের ভোট নির্ধারক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। শিবির এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকলেও, তাদের প্যানেলে চারজন নারী শিক্ষার্থী এবং চাকমা সম্প্রদায়ের একজন প্রার্থী রয়েছেন। এর মাধ্যমে তারা ছাত্রী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোটারদের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করছে।


Share This Post

শেয়ার করুন

Author:

Note For Readers: The CEO handles all legal and staff issues. Claiming human help before the first hearing isn't part of our rules. Our system uses humans and AI, including freelance journalists, editors, and reporters. The CEO can confirm if your issue involves a person or AI.