কেন্দ্রীয় কমিটি ব্যতীত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বাংলাদেশের সকল কমিটির কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। রোববার (২৭ জুলাই) বিকালে রাজধানীর শাহবাগ জাদুঘরের সামনে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি ও সাবেক সমন্বয়ক রিফাত রশিদ এ ঘোষণা দেন।
রিফাত রশিদ বলেন, “অর্গানোগ্রামের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটি ব্যতীত সারা দেশের সকল কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করা হলো। বৈষম্যবিরোধী ব্যানারকে কলুষিত করার জন্য পরাজিত শক্তিরা নানাভাবে এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করছে। যারা অনৈতিক কাজে জড়িত হবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”
এ ঘোষণার পেছনে রয়েছে সংগঠনের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদের বিরুদ্ধে উঠা চাঁদাবাজির অভিযোগ। রাজধানীর গুলশানে সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক এমপি শাম্মী আহমেদের বাসায় গিয়ে রিয়াদসহ কয়েকজন ৫০ লাখ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার দাবি করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় রিয়াদসহ চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, এবং পুলিশ তাদের ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও গুলশান থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোখলেছুর রহমান রোববার এই রিমান্ডের আবেদন করেন। এ বিষয়ে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। রিমান্ডের আবেদন করা অন্য আসামিরা হলেন—সাকাদাউন সিয়াম, সাদমান সাদাব, এবং মো. ইব্রাহিম হোসেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ১৭ জুলাই সকাল ১০টায় আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ ও কাজী গৌরব অপু গুলশানের ৮৩ নম্বর রোডে শাম্মী আহমেদের বাসায় গিয়ে হুমকি-ধামকি দিয়ে ৫০ লাখ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার দাবি করেন। টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তারা বাদী সিদ্দিক আবু জাফরকে আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যায়িত করে গ্রেফতারের হুমকি দেন। চাপের মুখে সিদ্দিক আবু জাফর নিজের কাছে থাকা ৫ লাখ টাকা এবং ভাইয়ের কাছ থেকে আরও ৫ লাখ টাকা দেন। এরপর ১৯ জুলাই রাত সাড়ে ১০টার দিকে রিয়াদ ও অপু আবারও বাদীর বাসায় গিয়ে ফ্ল্যাটের দরজায় জোরে ধাক্কা দেন। বিষয়টি গুলশান থানা পুলিশকে জানালে আসামিরা পালিয়ে যান।
গত ২৬ জুলাই রাত ৮টার দিকে রিয়াদসহ পাঁচজন পুনরায় শাম্মী আহমেদের বাসায় স্বর্ণালঙ্কার ও বাকি ৪০ লাখ টাকা দাবি করতে গেলে বাড়ির লোকজন পুলিশকে খবর দেন। গুলশান থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে রিয়াদ, সাকাদাউন সিয়াম, সাদমান সাদাব, মো. ইব্রাহিম হোসেন এবং একজন শিশু আসামি মো. আমিনুল ইসলামকে হাতেনাতে আটক করে। তবে কাজী গৌরব অপু ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান।
এ ঘটনার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ পৃথক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আটক পাঁচজনকে সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছে।
রিফাত রশিদ আরও জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আগামীতে কীভাবে পরিচালিত হবে, সে বিষয়ে শিগগিরই সিদ্ধান্ত জানানো হবে।