রবিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৫

গণ–অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণার প্রস্তুতি অন্তর্বর্তী সরকারের

 আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে, গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তির সময়ে, অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয় নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করতে পারে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে ভাষণের মাধ্যমে এই ঘোষণা দিতে পারেন বলে সরকারের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। সূত্রগুলো জানিয়েছে, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দেওয়া হবে। এ–সংক্রান্ত বার্তা আগস্টের প্রথম সপ্তাহেই ইসির কাছে পৌঁছানো হবে।

এদিকে, ৫ আগস্টের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই সনদ ঘোষণার বিষয়টি প্রায় নিশ্চিত। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ইতোমধ্যে জুলাই সনদের একটি খসড়া প্রস্তুত করেছে। ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় পর্বের আলোচনা শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে। গত রোববার সকালে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে আলোচনার শুরুতে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানান, সোমবারের মধ্যে জুলাই সনদের খসড়া দলগুলোর কাছে পাঠানো হবে। তিনি বলেন, “বড় ধরনের মৌলিক আপত্তি না উঠলে খসড়া নিয়ে আলোচনা করা হবে না। রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত সন্নিবেশিত করে প্রাথমিক সনদে ভূমিকা, পটভূমি এবং অঙ্গীকারের বিষয়গুলো থাকবে।”

নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে আলোচনা

১৩ জুন যুক্তরাজ্যের লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে, রমজান শুরুর আগে নির্বাচন আয়োজন সম্ভব হতে পারে, যদি সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জিত হয়। তবে এই ঘোষণার পর নির্বাচনের দৃশ্যমান ততপরতা না থাকায় এবং ইসির কাছে স্পষ্ট বার্তা না পৌঁছানোয় বিএনপির মধ্যে সন্দেহ তৈরি হয়। কিছু দলের পক্ষ থেকে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন ও সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতির দাবিও সন্দেহ বাড়িয়েছে।

২২ জুলাই থেকে তিন দফায় বিভিন্ন দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। ২৬ জুলাই ১৪টি দল ও জোটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, আগামী চার-পাঁচ দিনের মধ্যে নির্বাচনের সময়সীমা ও তারিখ ঘোষণা করবেন। এটাই আলোচনার সবচেয়ে ফলপ্রসূ ফলাফল। দেশের অরাজকতার একমাত্র সমাধান নির্বাচন।”

রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিক্রিয়া

বিএনপি নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণাকে ইতিবাচকভাবে দেখছে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রথম আলোকে বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা দুই–চার দিনের মধ্যে নির্বাচনের সময় ঘোষণা করলে আমরা খুশি হব। এটাই আমাদের দাবি।”

তবে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা কী বলেছেন, তা স্পষ্ট নয়। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হলেও সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা অপরিপক্ব হবে। সংস্কার ও গণহত্যার বিচার নির্বাচনের পূর্বশর্ত। জুলাই সনদ ঘোষণার আগে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা জুলাইয়ের চেতনাকে অবজ্ঞা করা।”

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব জানান, জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদ চূড়ান্ত হলে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণায় তাঁদের আপত্তি নেই।

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনা রয়েছে যে, জুলাই সনদ চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত না হওয়ার জন্য সরকার দলগুলোকে নির্বাচনের বিষয়ে আশ্বস্ত করতে চায়।


Share This Post

শেয়ার করুন

Author:

Note For Readers: The CEO handles all legal and staff issues. Claiming human help before the first hearing isn't part of our rules. Our system uses humans and AI, including freelance journalists, editors, and reporters. The CEO can confirm if your issue involves a person or AI.