কক্সবাজারের চকরিয়ায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পথসভার মঞ্চ ভাঙচুরের ঘটনায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) বিরুদ্ধে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের অনুসরণের অভিযোগ তুলেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। শনিবার (১৯ জুলাই) বিকেল পৌনে চারটার দিকে চকরিয়া পৌর শহরের জনতা শপিং সেন্টার চত্বরে এনসিপির পথসভার মঞ্চ ভেঙে দেয় বিএনপি ও তাদের অঙ্গ সংগঠন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনার পর সেনাবাহিনী ও পুলিশ হস্তক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ও দলীয় মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান শনিবার রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান। তিনি বলেন, “বিএনপি আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পথ অনুসরণ করছে। জুলাই অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই বিএনপির নেতাকর্মীদের এমন আচরণ জাতিকে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।” তিনি বিএনপিকে ইতিবাচক রাজনীতি করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “অসহিষ্ণু ও আক্রমণাত্মক হবেন না। জুলাইয়ের পর মানুষ আর সহিংস রাজনীতি দেখতে চায় না।”
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, রাজনীতিতে সমালোচনা স্বাভাবিক হলেও বিএনপি তাদের প্রধান নেতা সালাহউদ্দিন আহমদের বিরুদ্ধে সমালোচনা সহ্য করতে পারছে না। ইসলামী আন্দোলনের মুখপাত্র অভিযোগ করেন, “আওয়ামী লীগ শেখ মুজিব ও হাসিনাকে ‘পবিত্র’ বানিয়ে স্বৈরতন্ত্র কায়েম করেছিল। এখন বিএনপি তাদের দ্বিতীয় সারির নেতা সালাহউদ্দিন আহমদকেও সমালোচনার ঊর্ধ্বে মনে করে এনসিপির মঞ্চে হামলা করেছে। এটি আরও নির্মম স্বৈরতন্ত্রের আভাস দিচ্ছে।”
ঘটনার সূত্রপাত হয় শনিবার দুপুরে কক্সবাজার শহরের শহীদ দৌলত খান মাঠে এনসিপির এক সমাবেশে। সেখানে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদকে ইঙ্গিত করে ‘গডফাদার’ ও ‘চাঁদাবাজি’ সম্পৃক্ততার অভিযোগ তুলে বক্তব্য দেন। এই বক্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা চকরিয়ায় এনসিপির পথসভার মঞ্চ ভাঙচুর করে এবং সমাবেশের ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে। এনসিপির অভিযোগ, বিএনপির নেতাকর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালিয়ে ট্রাকের কাচও ভেঙেছে।
এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব এম. এম. সুজা উদ্দিন বলেন, “চকরিয়ায় আমাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে বিএনপির নেতাকর্মীরা হামলা ও মঞ্চ ভাঙচুর করেছে। এ কারণে আমাদের কর্মসূচি পণ্ড হয়ে যায়। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ায় আমরা আতঙ্কিত ছিলাম, তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় নিরাপদে চকরিয়া ত্যাগ করেছি।”
অপরদিকে, চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, “মঞ্চ ভাঙচুরের কোনো বড় ঘটনা ঘটেনি। একটি ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। পুলিশ ও সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। এনসিপির নেতারা চকরিয়ায় না নেমে ফিরে গেছেন।”
এ ঘটনায় কক্সবাজার জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শামীম আরা স্বপ্না বলেন, “সালাহউদ্দিন আহমদ কক্সবাজারের প্রাণ। তাকে নিয়ে এনসিপির অবমাননাকর বক্তব্যের প্রতিবাদে জেলাবাসী তাদের বয়কট করেছে। এনসিপির নেতারা রাজনৈতিক শিষ্টাচার জানে না।”
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এ ঘটনাকে ‘দুঃখজনক’ উল্লেখ করে বিএনপির উদ্দেশে বলেছে, “দেশব্যাপী সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির সঙ্গে বিএনপির সম্পৃক্ততার অভিযোগ থাকলেও তারা সমালোচনা সহ্য করতে পারছে না। এটি স্বৈরতন্ত্রের লক্ষণ।” দলটি সব রাজনৈতিক দলকে সহিষ্ণুতা ও শান্তিপূর্ণ রাজনীতির আহ্বান জানিয়েছে।