শুক্রবার, ২২ আগস্ট, ২০২৫

জাতীয় নির্বাচনে ইসলামি দলগুলোর ঐক্য প্রচেষ্টা: জামায়াতের সঙ্গে দূরত্ব

 দেশে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ায় এই নির্বাচনে তাদের সম্ভাব্য অনুপস্থিতিতে ভোটারদের কাছে বিএনপির বিকল্প হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে ইসলামি দলগুলো। তারা এক ছাতার নিচে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী। তবে, ইসলামি দলগুলোর অতীত ঐক্যের ইতিহাস সুখকর নয়, ফলে এবারের ঐক্য প্রচেষ্টা কতটা সফল হবে, নাকি অঙ্কুরেই বিনষ্ট হবে, তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা চলছে।

অধিকাংশ ইসলামি দল জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোট গঠন করে নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী নয়। এসব দলের নেতারা সরাসরি জোটের বিষয়ে কিছু না বললেও জামায়াতের সঙ্গে তাদের আদর্শ ও চিন্তাধারার পার্থক্য তুলে ধরছেন। ফলে জামায়াতের নেতৃত্বে ইসলামি দলগুলোর সমন্বয়ে একটি বৃহৎ জোট গঠনের আলোচনা চললেও তা সহজ হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, জোট বা সমঝোতার বিষয়টি এখনো টেবিল আলোচনায় সীমাবদ্ধ। নির্বাচন যত কাছে আসছে, বৃহৎ জোট নিয়ে সন্দেহ ও সংশয় বাড়ছে। এ অবস্থায় সব দল মিলে বৃহত্তর ঐক্য গড়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই বলে মনে করছেন অনেক ইসলামি দলের নেতা।

কিছু নেতা জামায়াতের সঙ্গে জোট না করার বিষয়টি প্রকাশ্যে বলতে না চাইলেও পৃথক ইসলামি জোট গঠনের চিন্তা করছেন। তবে জামায়াতে ইসলামী এখনো জোট গঠনের ব্যাপারে আশাবাদী। অন্যদিকে, চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ জামায়াতের সঙ্গে জোট গঠনে সক্রিয়। অতীতের বৈরিতা ভুলে এই দুই দলের মধ্যে সখ্য গড়ে উঠেছে, বিশেষ করে পিআর ইস্যুতে তাদের একই সুরে কথা বলতে দেখা গেছে। এটি ঐক্য প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, “জামায়াতে ইসলামী দেশের সব শ্রেণির মানুষকে সঙ্গে নিয়ে এগোতে চায়। আমাদের সঙ্গে সব শ্রেণির মানুষের সমর্থন আছে। আগামী নির্বাচনে সব ইসলামি দল নিয়ে বৃহৎ জোট গঠনের জন্য আমরা কাজ করছি। আলেম-ওলামা ও ইসলামি রাজনীতিকদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। নির্বাচন যত কাছে আসবে, আমাদের এই প্রক্রিয়া তত দৃশ্যমান হবে।” জামায়াতের সঙ্গে জোটে অনীহার প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমরা চেষ্টা করছি। আরও সময় গেলে শক্তিশালী ঐক্য বা সমঝোতা দেখতে পাবেন।”

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফিন্দী বলেন, “দলীয় দৃষ্টিভঙ্গির কারণে জামায়াতের সঙ্গে জোট বা সমঝোতার সম্ভাবনা দেখি না। এখনো আমরা কোনো জোটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিইনি।” তবে, তারা জামায়াত ছাড়া সমমনা দলগুলোর সঙ্গে জোট নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক বলেন, “ঐক্য প্রক্রিয়ায় থাকলেও জামায়াতের সঙ্গে জোটে যাচ্ছি না। ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে নির্বাচনি সমঝোতা নিয়ে বৈঠক হয়েছে, কিন্তু জামায়াতের সঙ্গে কোনো অফিশিয়াল আলোচনা হয়নি। জামায়াতের সঙ্গে আমাদের চিন্তাধারার পার্থক্য বিরাট।”

ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি সাখাওয়াত হোসেন রাজী বলেন, “মাঠপর্যায়ে জামায়াতের ব্যাপারে আলেমদের নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। আলেমদের মতামতের বাইরে আমরা যাব না।” বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী বলেন, “জামায়াতের সঙ্গে যোগাযোগ থাকলেও আমরা কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক দলগুলোর সঙ্গে জোট গঠনের চেষ্টা করছি।”

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সহকারী মহাসচিব মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ুম বলেন, “চরমোনাই পীরের নেতৃত্বে আমরা সব সময় ঐক্যের পক্ষে। জামায়াতের সঙ্গে জোট নিয়ে অফিশিয়াল কোনো বৈঠক হয়নি। আমরা ইসলাম, দেশ ও মানবতার পক্ষের দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করছি।”

বর্তমানে দেশে নিবন্ধিত ইসলামি রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ১০টি। এ ছাড়া কয়েকটি অনিবন্ধিত ছোট দলও সক্রিয়। অতীতে ঐক্য গঠনের চেষ্টা ব্যর্থ হলেও, ৫ আগস্ট-পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ইসলামি দলগুলোর ঐক্যচেষ্টার আলোচনা আবারও সামনে এসেছে।


Share This Post

শেয়ার করুন

Author:

Note For Readers: The CEO handles all legal and staff issues. Claiming human help before the first hearing isn't part of our rules. Our system uses humans and AI, including freelance journalists, editors, and reporters. The CEO can confirm if your issue involves a person or AI.