শনিবার, ৩০ আগস্ট, ২০২৫

শাপলা চত্বরের রক্তের স্রোতেই চব্বিশের চেতনার ধারা শুরু: মাওলানা মামুনুল হক

 রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে শনিবার (৩০ আগস্ট) শাপলা স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে ‘শাপলা কেন্দ্রীক বিভিন্ন কাজে অংশীজনের সম্মাননা ও সম্মিলনী–২০২৫’ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমীর ও শাপলা স্মৃতি সংসদের সভাপতি মাওলানা মামুনুল হক। তিনি বলেন, শাপলা চত্বরের রক্তের স্রোতেই চব্বিশের চেতনার ধারা শুরু হয়েছে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, জুলাই ঘোষণাপত্রে শাপলার কথা উল্লেখ না হওয়ার দায় ড. ইউনূস ও পুরো অন্তর্বর্তী সরকারকে নিতে হবে।

মাওলানা মামুনুল হক বলেন, “শাপলার চেতনাকে আগামীর বাংলাদেশের মাইলফলক হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য শাপলা স্মৃতি সংসদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শাপলার শহীদ পরিবারের অভিভাবকত্ব গ্রহণের জন্য গঠিত হয়েছে শাপলা শহীদ গার্ডিয়ান্স ফোরাম।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, জুলাইয়ের মূল্যায়ন মানেই শাপলাকেও মূল্যায়ন করা।

অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন শাপলা স্মৃতি সংসদের নির্বাহী সভাপতি মাওলানা আবুল হাসানাত জালালী। অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দীন, মাওলানা আল আবিদ শাকির এবং মাওলানা মাহমুদুল হাসান সাগর। এছাড়া বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের প্রচার সম্পাদক মাওলানা হাসান জুনাইদও পরিচালনায় অংশ নেন।

আলোচকরা বলেন, শাপলা চত্বরে সংঘটিত গণহত্যা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। এই ইতিহাস গোপন করার অপচেষ্টা বিগত এক যুগ ধরে চললেও শাপলার শহীদদের রক্ত তাদের ত্যাগকে চিরজীবন্ত রেখেছে। শাপলা স্মৃতি সংসদ আগামী প্রজন্মের কাছে এই সত্য তুলে ধরতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নায়েবে আমীর মাওলানা আব্দুল হামিদ বলেন, “শাপলার শহীদরা আমাদের ঈমানি শক্তির প্রতীক। তাদের আত্মত্যাগ ধারণ করেই ইসলামী আন্দোলন এগিয়ে যাবে।”

জামায়াতে ইসলাম বাংলাদেশের জয়েন্ট সেক্রেটারি আব্দুল হালিম বলেন, “বিগত ১৫ বছরে আলেম সমাজকে ভিন্নভাবে চিত্রিত করা হয়েছে। এখন তা পাল্টে গেছে।”

এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম মূখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ বলেন, “শাপলার ঘটনা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার ঘটনা। ৭২-এর পর থেকে দেশের চালক পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু দেশের কোনো পরিবর্তন হয়নি। সংবিধান পরিবর্তন না হলে আবারো শাপলা ফিরে আসবে।”

বিএনপির সমাজকল্যাণ সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন বলেন, “ইসলামের তাহযিব ও তামাদ্দুন রক্ষায় আপনাদের বজ্রকণ্ঠ যতদিন থাকবে, ততদিন এদেশে ইনসাফ থাকবে। ভিপি নূরের রক্ত বৃথা গেলে আগামীতে দাড়ি-টুপি ওয়ালাদের জন্যও অপমান অপেক্ষা করছে।”

খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন বলেন, “শাপলা শহীদদের স্মৃতি রক্ষায় প্রজন্মকে ইতিহাস সচেতন করা এখন জরুরি দায়িত্ব।”

সম্মাননা ও ক্রেস্ট প্রদান

অনুষ্ঠানে ২০১৩ সালের শাপলা গণহত্যার বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন, হতাহতদের চিকিৎসা সেবা, আইনি সহায়তা ও মানবাধিকারে সোচ্চার ভূমিকার জন্য প্রতিষ্ঠান ক্যাটাগরিতে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয় আলজাজিরা, দৈনিক আমার দেশ, দিগন্ত টেলিভিশন, ইসলামিক টেলিভিশন, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল, মানবাধিকার সংগঠন অধিকার ও হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরকে (২০১৩ সালের কমিটি)। এছাড়া গণমাধ্যম, আইন, মানবাধিকার, চিকিৎসা সেবা, সাহিত্য-সংস্কৃতি ও পুনর্বাসন সহায়তা খাতে অবদানের জন্য ২১ জন ব্যক্তিকে সম্মাননা ও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।

সম্মাননা ও ক্রেস্ট তুলে দেন শাপলা চত্বরে শহীদ মতিউর রহমান, শহীদ মুক্তার মিয়া ও শহীদ ইউনুছ আলীর পিতারা।


Share This Post

শেয়ার করুন

Author:

Note For Readers: The CEO handles all legal and staff issues. Claiming human help before the first hearing isn't part of our rules. Our system uses humans and AI, including freelance journalists, editors, and reporters. The CEO can confirm if your issue involves a person or AI.