সোমবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৫

বিএনপি ও এনসিপির নেতাদের মধ্যে উত্তপ্ত কথার লড়াই: নির্বাচন কমিশন শুনানিতে হট্টগোল

 রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশনে সংসদীয় সীমানা পুনর্নির্ধারণের শুনানিকে কেন্দ্র করে বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণ অঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর মধ্যে প্রকাশ্য কথার লড়াই তীব্র আকার ধারণ করেছে। এ ঘটনা রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

গত রোববার (২৪ আগস্ট) নির্বাচন কমিশনের শুনানিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও ৩ আসনের সীমানা নির্ধারণ নিয়ে দাবি-আপত্তির আলোচনা চলাকালীন বিএনপি ও এনসিপির নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা এবং পুলিশ সদস্যরা হস্তক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

ঘটনার পর এক সংবাদ সম্মেলনে হাসনাত আবদুল্লাহ অভিযোগ করেন, শুনানিতে এনসিপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা ছিল বিএনপির ভোটকেন্দ্র দখলের একটি ‘টেস্ট ম্যাচ’। তিনি রুমিন ফারহানাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “বিএনপির মধ্যে অনেকে আছেন, যারা আওয়ামী লীগের থেকেও বেশি আওয়ামী লীগ। তাদের মধ্যে অন্যতম রুমিন ফারহানা। তিনি আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী, ফ্ল্যাটভোগী এবং নির্বাচন কমিশনকে প্রভাবিত করার চেষ্টাকারী।” তিনি আরও বলেন, “জনগণের পালস বুঝুন, নইলে বাংলাদেশ আবার সংকটের দিকে যাবে।”

তবে, পরবর্তীতে এক ফেসবুক পোস্টে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, “নারীর রাজনৈতিক অবস্থান যা-ই হোক না কেন, তার শরীর, সম্পর্ক বা ব্যক্তিগত জীবনকে টেনে এনে স্লাটশেমিংয়ের অধিকার কারো নেই। আমি নিজে শ্রেণিঘৃণার শিকার হলেও, রুমিন ফারহানাসহ যেকোনো নারীর প্রতি স্লাটশেমিংয়ের বিরুদ্ধে আমার স্পষ্ট অবস্থান।”

হাসনাতের বক্তব্যের জবাবে সোমবার (২৫ আগস্ট) সন্ধ্যা ৭টা ৪৭ মিনিটে রুমিন ফারহানা তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি পোস্টে কড়া প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি লেখেন, “এটা ওই ফকিন্নির বাচ্চাটা না, যে আমাকে আওয়ামী লীগ বিষয়ক সম্পাদক বলেছে?” এই পোস্টে তিনি হাসনাত আবদুল্লাহর ছাত্রলীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তুলে কিছু ছবি ও স্ক্রিনশট শেয়ার করেন। তবে, পরবর্তীতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রুমিন ফারহানার শেয়ার করা ছাত্রলীগের সেই প্যাডটি ভুয়া। এর আগে এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমের বিরুদ্ধেও একই ধরনের ভুয়া প্যাড ফেসবুকে ছড়িয়েছিল। এমনকি, মজার ছলে কেউ কেউ এই প্যাডে ফুটবলার লিওনেল মেসির নামও যুক্ত করেছিলেন।

এর আগে শুনানির ঘটনা প্রসঙ্গে রুমিন ফারহানা বলেছিলেন, “আমি একজন নারী। শুনানিতে আমাকে প্রথমে ধাক্কা দেওয়া হয়। আমার লোকজন কি বসে থাকবে? তাদের প্রতিক্রিয়া স্বাভাবিক। এটাকে অতিরঞ্জিত করার কিছু নেই।” তিনি আরও বলেন, “১৫ বছর ধরে বিএনপির জন্য লড়াই করেছি, এখন নিজ দলের লোকজনই আমাকে ধাক্কা দিচ্ছে। ঠিক আছে, ধাক্কার বদলে ধাক্কা আসবেই।”

এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক মোহাম্মদ আতাউল্লাহ নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। তিনি দাবি করেন, রুমিন ফারহানার নেতৃত্বে এনসিপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা হয়েছে। তিনি বলেন, “শুনানিতে আমাকে প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়। পরে প্রবেশ করতে পেরে যখন আমার বক্তব্য রাখতে গিয়েছি, তখন রুমিন ফারহানা ও তার সমর্থকরা আমাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে নির্মমভাবে মারধর করেছেন।” তিনি রুমিন ফারহানাকে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। এছাড়া, তিনি নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে পুনর্গঠনের দাবি জানান।

রুমিন ফারহানার ফেসবুক পোস্টটি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। অনেকে তার বক্তব্যকে ‘অশালীন’ বলে সমালোচনা করেছেন, আবার কেউ কেউ তার পক্ষে সমর্থন জানিয়েছেন। একইভাবে, হাসনাত আবদুল্লাহর বক্তব্যও ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা বিষয়টি নিয়ে তুমুল বিতর্কে জড়িয়েছেন। একজন ব্যবহারকারী হাসনাতকে সমর্থন করে বলেন, “তিনি আমাদের ক্যাপ্টেন, ভবিষ্যতের আশার প্রতীক।” অন্যদিকে, আরেকজন ব্যবহারকারী রুমিন ফারহানার অবদানের কথা উল্লেখ করে বলেন, “তিনি ১৫ বছর ধরে বিএনপির জন্য লড়েছেন, তার অবদান অস্বীকার করা যায় না।”

এই ঘটনায় রুমিন ফারহানা ও হাসনাত আবদুল্লাহ উভয়েই নিজ নিজ অবস্থানে অনড়। তবে, তাদের ব্যক্তিগত আক্রমণ ও কটূ ভাষার ব্যবহার রাজনীতির শালীনতা ও ভদ্রতার প্রশ্ন সামনে এনেছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ ধরনের ঘটনা রাজনৈতিক সংস্কৃতির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এবং আগামী নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে জনগণের আস্থা ক্ষুণ্ন করতে পারে।

নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি। তবে, এই ঘটনা আগামী দিনে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়াতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।


Share This Post

শেয়ার করুন

Author:

Note For Readers: The CEO handles all legal and staff issues. Claiming human help before the first hearing isn't part of our rules. Our system uses humans and AI, including freelance journalists, editors, and reporters. The CEO can confirm if your issue involves a person or AI.