শেরপুরের নকলা উপজেলায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এর নবগঠিত উপজেলা সমন্বয় কমিটি থেকে একযোগে ১৫ জন নেতা পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগকারীদের মধ্যে ৫ জন যুগ্ম সমন্বয়কারী এবং ১০ জন সদস্য রয়েছেন। তারা নবগঠিত কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী হুমায়ুন কবির আকাশকে ‘অযোগ্য, অনাদর্শিক ও সামাজিকভাবে অগ্রহণযোগ্য’ দাবি করে মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট ২০২৫) রাতে নকলা সরকারি হাজি জালমামুদ কলেজ রোডের একটি বাড়িতে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
পদত্যাগকারী নেতারা হলেন—যুগ্ম সমন্বয়কারী মো. মমিনুল ইসলাম আরব, মনিরুল ইসলাম মনির, সিরাজুল ইসলাম সোহাগ, রাশিদুল জামান রাসেল ও জসীম উদ্দীন এবং সদস্য মো. দেলোয়ার হোসেন, সোহেল রানা, জাহাঙ্গীর আলম, সোহাগ মোল্লা, আলামিন মিয়া, রতন মিয়া, নাজমুল হাসান, সুমন মিয়া, আরিফ মিয়া এবং সাদেকুল ইসলাম শান্ত।
সংবাদ সম্মেলনে পদত্যাগকারী নেতারা বলেন, “জাতীয় নাগরিক পার্টির নকলা উপজেলা শাখার প্রধান সমন্বয়কারী হুমায়ুন কবির আকাশ একজন অযোগ্য, অনাদর্শিক ও সামাজিকভাবে অগ্রহণযোগ্য ব্যক্তি। এই প্রেক্ষাপটে আত্মবিশ্লেষণের পর আমরা সম্মিলিতভাবে এবং স্বেচ্ছায় উপজেলা সমন্বয় কমিটির স্ব-স্ব পদ থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং পুরো কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করছি।”
পদত্যাগকারী যুগ্ম সমন্বয়কারী সিরাজুল ইসলাম বলেন, “নকলায় যে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে, সেখানে প্রধান সমন্বয়কারীকে নিয়ে নানা অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া এনসিপির ত্যাগী নেতাদের সঠিক মূল্যায়ন করা হয়নি। তাই আমরা ১৫ জন এই কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছি। পদত্যাগপত্রগুলো এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছে।”
অন্যদিকে, পদত্যাগকারী আরেক নেতা মমিনুল ইসলাম আরব দাবি করেন, “প্রধান সমন্বয়কারীর বিরুদ্ধে শহীদ পরিবারের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। তার শিক্ষাগত যোগ্যতাও সন্তোষজনক নয়। এসব গুরুতর অভিযোগের কারণে আমরা পদত্যাগ করেছি।”
এই অভিযোগের জবাবে নকলা উপজেলা এনসিপির প্রধান সমন্বয়কারী মো. হুমায়ুন কবির আকাশ বলেন, “এই পদত্যাগের ঘটনা ষড়যন্ত্রমূলকভাবে সাজানো হয়েছে। আমি তাদের পদত্যাগপত্রের কোনো কাগজপত্র পাইনি। সাংগঠনিক নিয়ম অনুযায়ী, স্থানীয়ভাবে পদত্যাগপত্র না দিয়ে সরাসরি কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে পাঠানো নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। শিগগিরই সংবাদ সম্মেলন করে সব বিষয় পরিষ্কার করা হবে।”
শেরপুর জেলা এনসিপির প্রধান সমন্বয়কারী প্রকৌশলী মো. লিখন মিয়া এই ঘটনাকে ‘ষড়যন্ত্রমূলক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ আখ্যা দিয়ে বলেন, “যারা পদত্যাগ করেছেন বলে শোনা যাচ্ছে, তাদের কোনো লিখিত কাগজপত্র আমার হাতে আসেনি। পদত্যাগপত্রে চার থেকে পাঁচজনের স্বাক্ষর থাকলেও বাকিদের স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে বলে আমার ধারণা। এটি দ্রুত উন্মোচন করা হবে।”
উল্লেখ্য, গত ১০ আগস্ট এনসিপির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন এবং মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমের স্বাক্ষরে ৩২ সদস্যবিশিষ্ট নকলা উপজেলা সমন্বয় কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে হুমায়ুন কবির আকাশকে প্রধান সমন্বয়কারী, ১০ জনকে যুগ্ম সমন্বয়কারী এবং ২১ জনকে সদস্য করা হয়। কিন্তু কমিটি ঘোষণার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এর ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়, যা শেষ পর্যন্ত এই গণপদত্যাগের ঘটনায় রূপ নেয়।
এ বিষয়ে শেরপুর জেলা এনসিপির ১ নম্বর সমন্বয়কারী আলমগীর কবির বলেন, “পদত্যাগের বিষয়টি আমি ফেসবুকে দেখেছি। বিভাগীয় কমিটির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। জেলা কমিটি বসে এটি মূল্যায়ন করবে এবং পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”