বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট, ২০২৫

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে জাকসু নির্বাচনে ২৭৩ জনের মনোনয়নপত্র দাখিল, ছাত্রী হলে প্রার্থী কম

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে ২৫টি পদের বিপরীতে ২৭৩ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১টি আবাসিক হলের ৩১৫টি পদের জন্য ৪৬৭ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তবে ছাত্রীদের ১০টি হলে পদের তুলনায় প্রার্থীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কম। এর মধ্যে পাঁচটি হলে নির্ধারিত পদের সমান প্রার্থীও পাওয়া যায়নি।

মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ সময় ছিল গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা। নির্ধারিত সময় শেষে জাকসু নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে মনোনয়নপত্র দাখিলের তথ্য জানান নির্বাচন কমিশনের সদস্যসচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম রাশিদুল আলম। তিনি বলেন, “নির্বাচন নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই। সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তৎপর রয়েছে।”

দীর্ঘ ৩৩ বছর পর আগামী ১১ সেপ্টেম্বর জাকসুর ২৫টি পদে ও ২১টি আবাসিক হলের ৩১৫টি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ২৯ আগস্ট প্রকাশ করা হবে।

ছাত্রী হলে প্রার্থী কম

ছাত্রী হলগুলোতে প্রার্থীর সংখ্যা কম থাকায় প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, হল সংসদে ১৫টি পদে নির্বাচন হওয়ার কথা। কিন্তু পাঁচটি ছাত্রী হলে ১৫টি পদের জন্য পর্যাপ্ত প্রার্থী পাওয়া যায়নি। বাকি হলগুলোতেও প্রার্থীর সংখ্যা পদের তুলনায় অনেক কম। নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলে ৬ জন, ১৩ নম্বর ছাত্রী হলে ৬ জন, সুফিয়া কামাল হলে ১০ জন, বেগম খালেদা জিয়া হলে ১১ জন এবং প্রীতিলতা হলে ১৩ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। ফজিলাতুন্নেছা হলে ১৫ জন, জাহানারা ইমাম হলে ১৬ জন এবং ১৫ নম্বর ছাত্রী হল, বীর প্রতীক তারামন বিবি হল ও রোকেয়া হলে ১৭ জন করে প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এসব হলের বেশির ভাগ পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই নির্বাচন হতে পারে।

১৫ নম্বর ছাত্রী হলের আবাসিক শিক্ষার্থী বহ্নি আহমেদ বলেন, “আমার হলে ১৫টি পদে মাত্র ১৭ জন প্রার্থী হয়েছেন। মনোনয়ন প্রত্যাহারের সময় অনেকে প্রত্যাহার করতে পারেন। তাই প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্ভাবনা খুবই কম।”

ছাত্রী হলে প্রার্থী কম হওয়ার কারণ

ছাত্রী হলে প্রার্থী কম হওয়ার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ জন ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অন্তত চারজন প্রার্থী হতে আগ্রহী ছিলেন, কিন্তু পরিবারের সম্মতি না পাওয়ায় নির্বাচনে অংশ নেননি। এছাড়া জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া অনেক ছাত্রীর পড়াশোনা শেষ হওয়ায় তাঁরা ভোটার হতে পারেননি, ফলে নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না।

জাকসু নির্বাচন কমিশনের সদস্য ও জীববিজ্ঞান অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার বলেন, “গঠনতন্ত্র অনুযায়ী হল সংসদ চালাতে এক-তৃতীয়াংশ সদস্য থাকলেই চলে। সে হিসেবে ৬ জন সদস্য নির্বাচিত থাকলেই হল সংসদ চলমান রাখা সম্ভব। তবে জাকসুর গঠনতন্ত্রে শূন্য পদে পুনরায় নির্বাচনের বিধান থাকলেও হল সংসদের গঠনতন্ত্রে এমন কোনো বিধান নেই।”

ছাত্র হলে প্রার্থী বেশি

ছাত্র হলগুলোতে প্রার্থীর সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলে ১৫টি পদের বিপরীতে ৬০ জন এবং শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হলে ৪৯ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এছাড়া আল-বেরুনী হলে ১৮ জন, আ ফ ম কামালউদ্দিন হলে ২২ জন, মীর মশাররফ হোসেন হলে ৩০ জন, শহীদ সালাম-বরকত হলে ২২ জন, মওলানা ভাসানী হলে ২৭ জন, ১০ নম্বর ছাত্র হলে ৩০ জন, শহীদ রফিক-জব্বার হলে ২১ জন, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে ২২ জন এবং ২১ নম্বর ছাত্র হলে ৩৮ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

ছাত্রশিবিরের প্যানেল ঘোষণা

মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিনে ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’-এর ব্যানারে প্যানেল ঘোষণা করেছে ছাত্রশিবির। গতকাল পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সহসভাপতি পদে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সদস্য আরিফুল্লাহ আদিব এবং সাধারণ সম্পাদক পদে অফিস সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

ছাত্রশিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মুহিবুর রহমান বলেন, “জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ভূমিকা পালনকারী ও শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে কাজ করা শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমাদের প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে। এতে জুলাই আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থী, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী এবং ৬ জন নারী শিক্ষার্থী রয়েছেন।”

গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ ও ছাত্রদল

গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ জানিয়েছে, তাদের প্যানেলের নাম হবে ‘শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম’। বামপন্থী সংগঠন ও সাংস্কৃতিক জোটের একাধিক প্যানেল হতে পারে। ছাত্রদলের প্রার্থী এখনও চূড়ান্ত হয়নি। শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন বাবর বলেন, “আমাদের প্রার্থী প্রায় চূড়ান্ত। রোববার আমরা প্যানেল ঘোষণা করব।”


Share This Post

শেয়ার করুন

Author:

Note For Readers: The CEO handles all legal and staff issues. Claiming human help before the first hearing isn't part of our rules. Our system uses humans and AI, including freelance journalists, editors, and reporters. The CEO can confirm if your issue involves a person or AI.